গ্রেফতার এড়াতে পুরুষশূন্য গ্রাম, ফাকা বাড়িতে হচ্ছে লুটপাট
- প্রকাশিত সময় ১১:৪৪:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
- / 141
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি পূর্ব পাড়ার হোসেন মাস্টার গ্রুপ এবং চরগড়গড়ি পশ্চিম পাড়ার সাজু-খাইরুল গ্রুপের মধ্যে জমি কটে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়।
এই সংঘর্ষে চরগড়গড়ি পশ্চিম পাড়ার সাজু-খাইরুল গ্রুপের ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা খায়রুল ইসলাম নিহত হন এবং হোসেন মাস্টার গ্রুপের ইসাহক আলীর হাত কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও প্রায় ৩০ জনের মত আহত হন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশংকাজনক।
শনিবার ২০ এপ্রিল রাতে নিহতের ভাই মোঃ আনারুল বাদী হয়ে হোসেন মাস্টার গ্রুপের বিএনপি নেতা মকলেছুর রহমান মজনুকে প্রধান আসামী এবং আরও ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। আর গ্রেফতার এড়াতে পুরোগ্রাম পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হত্যা মামলার নামীয় আসামীরা হলেন, হোসেন মাস্টার গ্রুপের রুবেল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আনারুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম।
এই সুযোগে গ্রাম ছাড়া মানুষদের ঘরের আসবাপত্র, মালামাল, খাদ্য সামগ্রি, গৃহপালিত পশু, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি লুটপাট হচ্ছে। আর লুটপাট রোধে এখন আতংকগ্রস্থ পরিবারগুলো নিজেরাই মালামাল সরিয়ে ফেলছে নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে।
লুটপাটের ভয়ে অন্যত্র মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসী।
এসব ঘটনায় উত্তেজনা, নাশকতা, ক্ষয়ক্ষতিসহ লুটপাট ঠেকাতে পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গ্রামটিতে অবস্থান নিয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
রোববার ২১ এপ্রিল সকালে সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি আলহাজ্বমোড় এলাকা ঘুরে পুরুষ শুন্য বাড়ির মহিলা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন আগে চরগড়গড়ি এলাকার হোসেন মাস্টার গ্রুপের রনি সাজু-খাইরুল গ্রপের এনামুলের নিকট দেড় লাখ টাকায় ২০ কাঠা (এক বিঘা) জমি পুকুর খননের জন্য কট দেন। কিন্তু জমির পরিমান ১৭ কাঠা হওয়ায় এনামুল দেড় লাখ টাকার পরিবর্তে এক লাখ টাকা প্রদান করেন। বকেয়া ৫০ হাজার টাকা না দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে তাদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়।
এই ঘটনায় সাজু-খাইরুল গ্রুপের লোকজন চরের মাঠে গিয়ে হোসেন মাস্টার গ্রুপের শাহিন ও মিঠুনকে মারপিট করে। ফলে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার দিন শুক্রবার বিষয়টি সমাধানের জন্য দুই গ্রুপই চর গড়গড়ি বাজারে শালিস বৈঠকের আয়োজন করে।
কিন্তু দুপুর আড়াইটার দিকে হোসেন মাস্টার গ্রুপের লোকজন সাজু-খাইরুল গ্রুপের হুজুর আলীকে মেরে নাক দিয়ে রক্ত বের করে দেয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই গ্রুপই দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া, রাম দা, চাপাতি, লোহার পাইপ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রথমে উভয় গ্রুপই ইট পাটকেল ছুড়ে মারে। এক পর্যায়ে ইটের আঘাতে সাজু-খাইরুল গ্রুপের খাইরুল ইসলাম মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে পড়ে যায়। তখন হোসেন মাস্টার গ্রুপের লোকজন মাথায় কুপিয়ে খাইরুলকে হত্যা করে। আর সাজু-খাইরুল গ্রুপের লোকজন হোসেন মাস্টার গ্রুপের ইসাহক আলী ওরফে ইসাইকে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এই সংঘর্ষে হাসুয়া, রামদা, চাপাতি ও লোহার পাইপের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এদের ১০ জনের অবস্থা খুবই আশংকাজনক।
আরিফা, হোসনে আরা, ছালেহা, তাসলিমাসহ বেশ কয়েকজন গৃহবধুরা অভিযোগ করে জানান, থানায় নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশী গ্রেফতার ও হয়রানির ভয়ে পুরুষরা গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। এই সুযোগে কিছু লোকজন আসামী ও সাধারণ মানুষের বাড়িতে লুটপাট চালাচ্ছে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, কবুতরসহ আসবাপত্র নিয়ে যাচ্ছে। এই কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে বাড়ির মালামাল সরিয়ে অন্যগ্রামে নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে মোতায়েনকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, খাইরুল হত্যা মামলায় নামীয় চার আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে কিছু মানুষ নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের মালামাল নিজেরাই অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। র্যাব ও ডিবি পুলিশের টহল চলমান রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, চর গড়গড়ি গ্রামে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকে একটি মামলা হয়েছে। অপর পক্ষের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া ইসাহক আলী ওরফে ইসাই পরিবার বা ওই পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। মামলায় সাধারণ মানুষরা যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সেই দিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হয়েছে। পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেবে।