ঢাকা ০৪:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪
দু’হাতে ভর দিয়েই টানছেন সংসারের হাল

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছরেও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়নি রেবেকা

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত সময় ০৪:০৮:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
  • / 161

রানা প্লাজা ধ্বসে পঙ্গুত্বের শিকার রেবেকা বেগম।



আজ ২৪ এপ্রিল, বুধবার ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর।

সেদিন কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার গৃহবধূ রেবেকা বেগম।

স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানকে খাইয়ে নিজে না খেয়েই পরিবারের ৭ সদস্য মিলে রানা প্লাজার দ্বিতীয় তলায় কাজ করছিলেন। পাশের লাইনে রেবেকার মা তখন ডাকছিলেন খাওয়ার জন্য। এ সময় হঠাৎ করে বিকট শব্দে ভবনটি ভেঙে পড়ে।

সেই কক্ষেই দুই পা দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে আটকা পড়েন গার্মেন্টস শ্রমিক রেবেকা বেগম। বয়স তখন তার মাত্র ১৭ বছর।

দুইদিন পর সেখান থেকে স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী এসে তাকে উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় রেবেকা বেগমের পরিবারের দুইজন কোনমতে প্রাণে বেঁচে ফিরলেও মাসহ বাকিরা হারিয়ে গেছেন রানা প্লাজার ভেঙ্গে পড়া ভবনের ইট পাথরের কংক্রিটের ভেতর।

রানা প্লাজা ধ্বসে পঙ্গুত্বের শিকার রেবেকা বেগম ও তার পুত্র – কন্যা।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের রাজমিস্তি মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা বেগম (২৮)।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে দুই পা হারিয়ে চির পঙ্গুত্ব জীবন বরণ করতে হয় রেবেকা বেগমকে।

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল সকালে সরেজমিনে রাবাই চেয়ারম্যানপাড়ায় রেবেকা বেগমের সঙ্গে কথা হয়।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে রেবেকা বলেন, সকাল ৯টার দিকে বিকট শব্দে রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ে। ঘটনার পর জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান আসলে দেখেন পায়ের ওপর সিমেন্টের বিম চাপা পড়ে আছে।

পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে এক বছর ধরে রেবেকার চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই সময় তার বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে।

এরপর দীর্ঘ ১১ বছর পার হয়ে গেছে। এরমধ্যে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানের মা হয়েছেন রেবেকা। ছেলে মাদানী নূর (৫) আর মেয়ে সিরাতুন মনতা (১০) পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

পঙ্গুত্ববরণকারি গার্মেন্টস শ্রমিক রেবেকা বেগম বলেন, ওই রানা প্লাজার ভবন ধ্বসের পর সরকারি ঘোষণা ছিল যেসব শ্রমিক শরীরের দুইটি অঙ্গ হারিয়েছেন তাদেরকে ১৫ লাখ এবং যারা একটি অঙ্গ হারিয়েছেন তারা ১২লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু আমার দুইটি পা হারালেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

রেবেকা বেগম একটি পা হারিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের এমন ভুল তথ্যের কারণে রেবেকা সরকার ঘোষিত পুরোপুুরি অর্থ পাননি।

তবে অনুদানের টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে রেখেছেন। সেই টাকা থেকে প্রতি মাসে যা পান তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলছে। তাকে ও বাচ্চাদের দেখাশুনার জন্য তার স্বামী বাইরে কাজ করতে পারেন না।

রেবেকা বেগম আরো বলেন, তার দুই পায়ে চারবার করে আটবার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন করতে হয়েছে। বর্তমানে দুই পায়ের হাড্ডি বের হয়ে আসায় প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। চিকিৎসক খুব দ্রুত আবারও অপারেশন করতে বলেছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সেটি করাতে পারছি না।

রেবেকা বেগমের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “রানা প্লাজা ধসের দুই বছর আগে পছন্দ করে তারা বিয়ে করেছিলেন। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন আর রেবেকা বেগম রানা প্লাজার পোশাক কারখানায়। বেশ ভালোই চলছিল তাদের সুখের সংসার। এরপর রানা প্লাজা ধ্বসে তাদের সুখের সংসার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।”

“ওই দুর্ঘটনায় ইট-পাথরের স্তুপে হারিয়ে গেছেন মা চান বানু। মারা গেছেন দাদি কহিনুর ও ফুপু রাবেয়া। তবে ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের আওতায় ৭ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে বারাই আলাদিপুর ইউনিয়নে ৫ শতাংশ জমির ওপর একটি দুর্যোগ সহণীয় বাড়ী নির্মাণ করে দিয়েছে।”

এদিকে একই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন ফুলবাড়ী উপজেলার ৩নং কাজিহাল ইউনিয়নের কাজিহাল ডাঙা গ্রামের আতাউর রহমানের স্ত্রী গার্মেন্টস শ্রমিক গুলশান আক্তার শাবানা।

ছেলেসহ পরিবারের লোকজনদের নিয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে প্রতি বছর দিনটি স্মরণ করেন স্বামী আতাউর রহমান।

আতাউর রহমান বলেন, ঘটনার দিন সকালে রানা প্লাজায় গার্মেন্টেসের কাজে যোগ দেন তার স্ত্রী গুলশান আক্তার শাবানা। ভবন ধ্বসের পর দীর্ঘ সময় ধরে তাকে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান করতে পারেননি। তবে ভবনের নিখোঁজদের তালিকায় শাবানার নাম ছিল। ওই তালিকার সূত্র ধরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৩ লাখ টাকা পাওয়া গেলেও পাননি স্ত্রীকে কিংবা তার মরদেহ।

দু’হাতে ভর দিয়েই টানছেন সংসারের হাল

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছরেও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়নি রেবেকা

প্রকাশিত সময় ০৪:০৮:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪



আজ ২৪ এপ্রিল, বুধবার ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর।

সেদিন কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার গৃহবধূ রেবেকা বেগম।

স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানকে খাইয়ে নিজে না খেয়েই পরিবারের ৭ সদস্য মিলে রানা প্লাজার দ্বিতীয় তলায় কাজ করছিলেন। পাশের লাইনে রেবেকার মা তখন ডাকছিলেন খাওয়ার জন্য। এ সময় হঠাৎ করে বিকট শব্দে ভবনটি ভেঙে পড়ে।

সেই কক্ষেই দুই পা দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে আটকা পড়েন গার্মেন্টস শ্রমিক রেবেকা বেগম। বয়স তখন তার মাত্র ১৭ বছর।

দুইদিন পর সেখান থেকে স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী এসে তাকে উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় রেবেকা বেগমের পরিবারের দুইজন কোনমতে প্রাণে বেঁচে ফিরলেও মাসহ বাকিরা হারিয়ে গেছেন রানা প্লাজার ভেঙ্গে পড়া ভবনের ইট পাথরের কংক্রিটের ভেতর।

রানা প্লাজা ধ্বসে পঙ্গুত্বের শিকার রেবেকা বেগম ও তার পুত্র – কন্যা।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের রাজমিস্তি মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা বেগম (২৮)।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে দুই পা হারিয়ে চির পঙ্গুত্ব জীবন বরণ করতে হয় রেবেকা বেগমকে।

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল সকালে সরেজমিনে রাবাই চেয়ারম্যানপাড়ায় রেবেকা বেগমের সঙ্গে কথা হয়।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে রেবেকা বলেন, সকাল ৯টার দিকে বিকট শব্দে রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ে। ঘটনার পর জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান আসলে দেখেন পায়ের ওপর সিমেন্টের বিম চাপা পড়ে আছে।

পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে এক বছর ধরে রেবেকার চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই সময় তার বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে।

এরপর দীর্ঘ ১১ বছর পার হয়ে গেছে। এরমধ্যে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানের মা হয়েছেন রেবেকা। ছেলে মাদানী নূর (৫) আর মেয়ে সিরাতুন মনতা (১০) পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

পঙ্গুত্ববরণকারি গার্মেন্টস শ্রমিক রেবেকা বেগম বলেন, ওই রানা প্লাজার ভবন ধ্বসের পর সরকারি ঘোষণা ছিল যেসব শ্রমিক শরীরের দুইটি অঙ্গ হারিয়েছেন তাদেরকে ১৫ লাখ এবং যারা একটি অঙ্গ হারিয়েছেন তারা ১২লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু আমার দুইটি পা হারালেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে অনুদান দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

রেবেকা বেগম একটি পা হারিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের এমন ভুল তথ্যের কারণে রেবেকা সরকার ঘোষিত পুরোপুুরি অর্থ পাননি।

তবে অনুদানের টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে রেখেছেন। সেই টাকা থেকে প্রতি মাসে যা পান তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলছে। তাকে ও বাচ্চাদের দেখাশুনার জন্য তার স্বামী বাইরে কাজ করতে পারেন না।

রেবেকা বেগম আরো বলেন, তার দুই পায়ে চারবার করে আটবার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন করতে হয়েছে। বর্তমানে দুই পায়ের হাড্ডি বের হয়ে আসায় প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। চিকিৎসক খুব দ্রুত আবারও অপারেশন করতে বলেছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সেটি করাতে পারছি না।

রেবেকা বেগমের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “রানা প্লাজা ধসের দুই বছর আগে পছন্দ করে তারা বিয়ে করেছিলেন। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন আর রেবেকা বেগম রানা প্লাজার পোশাক কারখানায়। বেশ ভালোই চলছিল তাদের সুখের সংসার। এরপর রানা প্লাজা ধ্বসে তাদের সুখের সংসার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।”

“ওই দুর্ঘটনায় ইট-পাথরের স্তুপে হারিয়ে গেছেন মা চান বানু। মারা গেছেন দাদি কহিনুর ও ফুপু রাবেয়া। তবে ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের আওতায় ৭ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে বারাই আলাদিপুর ইউনিয়নে ৫ শতাংশ জমির ওপর একটি দুর্যোগ সহণীয় বাড়ী নির্মাণ করে দিয়েছে।”

এদিকে একই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন ফুলবাড়ী উপজেলার ৩নং কাজিহাল ইউনিয়নের কাজিহাল ডাঙা গ্রামের আতাউর রহমানের স্ত্রী গার্মেন্টস শ্রমিক গুলশান আক্তার শাবানা।

ছেলেসহ পরিবারের লোকজনদের নিয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে প্রতি বছর দিনটি স্মরণ করেন স্বামী আতাউর রহমান।

আতাউর রহমান বলেন, ঘটনার দিন সকালে রানা প্লাজায় গার্মেন্টেসের কাজে যোগ দেন তার স্ত্রী গুলশান আক্তার শাবানা। ভবন ধ্বসের পর দীর্ঘ সময় ধরে তাকে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান করতে পারেননি। তবে ভবনের নিখোঁজদের তালিকায় শাবানার নাম ছিল। ওই তালিকার সূত্র ধরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৩ লাখ টাকা পাওয়া গেলেও পাননি স্ত্রীকে কিংবা তার মরদেহ।