আবারও নবজাতকের মৃত্যু
জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রসূতির ডেলিভারি করেন আয়া-ঝাড়ুদার
- প্রকাশিত সময় ০৬:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
- / 147
ঈশ্বরদীর জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে গাইনি বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতিতে প্রসূতির ডেলিভারি (সন্তান প্রসব) করেন আয়া-ঝাড়ুদার। এতে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রসূতি নারীর জীবন এখন সংকটাপন্ন।
শনিবার ৮ জুন ভোররাতে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মালেকুল আফতাব ভূঁইয়া।
উত্তেজনারোধে জমজম হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। আর এই ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন মৃত নবজাতকের বাবা মোঃ সাইদুর রহমান।
ভুক্তভোগি পরিবার ও থানায় দায়ের করা এজাহার সুত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীর পার্শ্ববর্তী লালপুরের মাজদিয়া এলাকার সাইদুর রহমানের স্ত্রী জিমু খাতুনের সন্তান প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাফিসা কবিরের নিকট নিয়ে আসেন। ‘বাচ্চার পজিশন ঠিক নেই তাই নরমালে সম্ভব না হলে অপারেশনের মাধ্যমে ডেলিভারি করাতে হবে’ বলে জানান ডাক্তার নাফিসা। পরিবার থেকে অপারেশন করার বিষয়ে সম্মতি দিলে, তিন ঘন্টা পর অপারেশন করা হবে জানিয়ে বাসায় চলে যান ডাক্তার নাফিসা।
এর দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর জমজম হাসপাতালের আয়া ছালমা খাতুন, ঝাড়ুদার পারুল, সাথি ও ওটিবয় মোঃ রাসেল প্রসূতি জিমুকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এরপর তারা নরমালে বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে প্রসূতির গোপনাঙ্গ ছিড়েছুটে একাকার করে ফেলেন এবং মৃত সন্তান প্রসব করান। তারাই প্রসূতির গোপনাঙ্গের দুইপাশে ১৬ টি সেলাই দেন। কিন্তু রক্তক্ষরণ অব্যহত থাকে। এতে জীবন সংকটে পড়েছেন প্রসূতি।
পরে খবর পেয়ে ডাক্তার নাফিসা কবির ও তার স্বামী ডাক্তার রিয়াদুল কবির জান্নত হাসপাতালে এসে প্রসূতির স্বামী সাইদুরের সঙ্গে অশালিন আচরণ করেন এবং তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখেন। অবস্থা বেগতিক দেখে সাইদুর জরুরী সেবা নম্বার ৯৯৯ কল করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে সাইদুরকে উদ্ধার করেন। এদিকে প্রসূতির জীবন সংকটাপন্ন অবস্থা ও নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে উত্তেজিত হয়ে পড়েন স্বজনরা।
প্রসুতির স্বামী ও নবজাতকের বাবা সাইদুর রহমান বলেন, ‘অপারেশন ছাড়া নরমালে ডেলিভারি করাতে গেলে ঝুঁকি আছে বলেন ডাক্তার নাফিসা। তিন ঘন্টাপর অপারেশন করা হবে জানানোর পর ডাক্তার নাফিসার অনুপস্থিতিতে ঝাড়ুদার, আয়ারা নার্স সেজে টেনে হেঁচড়ে ডেলিভারি করাতে গিয়ে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমার স্ত্রীর গোপনাঙ্গ ছিঁড়েছিটে ফেলে ১৬ টি সেলাই দিয়েছে। রক্তক্ষরণ অব্যহত রয়েছে। অবস্থা সংকটময়। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই বিষয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাবনা সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে।’
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মালেকুল আফতাব ভূঁইয়া বলেন, ‘খবর পেয়ে জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। প্রসূতির স্বজন ও হাসপাতালের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনাটি তদন্তের জন্য একজন গাইনি বিশেষজ্ঞকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালসহ ঈশ্বরদীর ক্লিনিকগুলো অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ভর্তি। বার বার নবজাতক ও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সবগুলো ঘটনার তদন্ত করা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন পাবনার ডাক্তার মোহাম্মাদ খায়রুল কবির বলেন, ‘এই ব্যাপারে নিহত নবজাতকের বাবা সাইদুর রহমান জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসূতির অবস্থা সংকটময় হওয়ার অভিযোগে এজাহার দায়ের করেছেন প্রসূতির স্বামী সাইদুর রহমান। জমজম হাসপাতাল থেকে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার নাফিসা কবির বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে নার্সরা নরমালে ডেলিভারি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নবজাতকের গলায় নাড়ি জড়িয়ে ফাঁস লেগে মারা গেছে। এটা হত্যা নয়, একটি দুর্ঘটনা মাত্র।’
জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালের আয়া সালমার কোন জায়গা থেকে কোন ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়া আছে এমন কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১১ মার্চ উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারি গ্রামের ইমারত আলীর মেয়ে ইসরাত জাহান সিন্তার সন্তান প্রসবের সময় নবজাতকের মৃত্যু হয় এই হাসপাতালে। প্রসূতি সিন্তার অবস্থাও গুরুতর ছিল। তাকেও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।