ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের শালিস করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
- প্রকাশিত সময় ১০:০৭:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
- / 84
হুজাইফা (৩০) নামের এক যুবক কর্তৃক বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী (২৫)। আর ধর্ষণের বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ঘরোয়া শালিসের মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে চাপ প্রয়োগ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদল নেতার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ জোরপূর্বক ঘরোয়াভাবে মিমাংসা করে জরিমানার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা শরীফুল ইসলাম শরীফ ও ভেড়ামারার জিএম নামে এক যুবদল কর্মী।
গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ভুক্তভোগী ওই নারী ও অভিযুক্ত হুজাইফাকে নিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যুবদল কর্মী জিএম এর অফিসে এ শালিসের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই নারী ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারী গ্রামের বাসিন্দা ও অভিযুক্ত হুজাইফা একই ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামের আলম প্রামানিকের ছেলে।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ‘প্রায় ৬ মাস আগে হুজাইফার সাথে তার পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। বিয়ের প্রলোভনে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে হুজাইফা। ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারনে একপর্যায়ে গর্ভবতী হলে কৌশলে বাচ্চাটির ভ্রুন নষ্ট করে হুজাইফা।’
‘সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে হুজাইফা বিয়ের কথা বলে ভেড়ামারায় তার এক নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে আবারো ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন ভুক্তভোগী আপত্তি জানালে ঘটনাটি আশেপাশে জানাজানি হয় এবং স্থানীয়রা তাদের আটকে রাখে।’
‘পরে মোকাররমপুর ইউনিয়নের যুবদল কর্মী জিএম এর অফিসে নিয়ে গিয়ে ঘরোয়াভাবে শালিস করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয় এবং হুজাইফার নানা ৬০ হাজার টাকা শরিফ ও জিএমের হাতে দেয়।’
‘টাকা পেয়ে তারা হুজাইফাকে ছেড়ে দেয় এবং জিএম ভুক্তভোগীকে তার লালসার শিকার বানানোর চেষ্টা করে। তখন ভুক্তভোগীর দুলাভাই পাভেল জিএম এর কবল থেকে তাকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদীতে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ওই নারী জানতে পারেন তার দুলাভাইকে ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে জিএম। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া কারাগারে রয়েছেন।’
এদিকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক শরীফুল ইসলাম শরীফ ও যুবদল নেতা জিএম ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওই নারীকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
এবিষয়ে জানতে হুজাইফাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে রং নাম্বার বলে কেটে দেন তিনি।
হুজাইফার নানা মোঃ বক্কার বলেন, ‘হুজাইফা আমার নাতি। গত মাসের শেষের দিকে নারীঘটিত একটি সমস্যা হয়েছিল। খবর পেয়ে আমি আর আমার ছেলে গিয়ে টাকা দিয়ে বিষয়টা মিমাংসা করেছি। পরে আমার নাতিকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’
অপরদিকে মিমাংসার বিষয়টি স্বীকার করলেও অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম শরীফ।
তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী ওই নারী পূর্বে বিবাহিত ছিলো। অভিযুক্ত ছেলেটিকে কৌশলে তার বান্ধবীর বাসায় ডেকে নিয়ে আটকে রেখেছিল তারা। পরে মীমাংসা করে উভয় পক্ষের কাছে তাদের ছেলে মেয়েকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক কোন লেনদেনের বিষয় জানিনা।’
ভেড়ামারার মোকারমপুর ইউনিয়নের যুবদল কর্মী জিএম বলেন, ‘ছেলে ও মেয়েকে আমাদের এলাকার লোকজন আটক করেছিল। পরে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শরিফ এসে বিষয়টা মিমাংসা করেছে। ৬০ হাজার টাকার কথা জিজ্ঞাসা করলে জিএম বলেন- এই বিষয়ে আপনি শরিফ ভাইয়ের সাথে কথা বলেন।’
এবিষয়ে পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ইয়ামিন খান বলেন, ‘এ ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে শরীফের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমানিত হয় তাহলে দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’