ঈশ্বরদীর হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু
- প্রকাশিত সময় ০৩:০১:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 19
অপারেশন থিয়েটারে গাইনি বিশেষজ্ঞ ও পরে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের করুণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
আর এ ঘটনায় মৃত নবজাতকের মরদেহ আটকিয়ে পরিবারের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করে এম্বুলেন্স চালককে দেওয়া হয়।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ক্লিনিক কতৃপক্ষ মৃত নবজাতকের পরিবার ও স্বজনদের ম্যানেজ করে গত রবিবার রাতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে মিমাংমা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার রাত ৯ টা পর্যন্ত ঈশ্বরদীর হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে এসব ঘটনা ঘটে।
গতকাল (সোমবার) বিকেলে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী শহরের ভাটাপাড়া এলাকার মৃত সেকেন্দার আলী শাহ ছেলে আশিকুর রহমান আকাশের গর্ভবতি স্ত্রী মারিয়া খাতুন (২২) হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের মালিক ও গাইনি (প্রসূতি) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লতিফা সুলতানা নিকট চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের জন্য হেলথ কেয়ারে ভর্তি করা হয়। সকালে আল্টাসাউন্ড করে বাচ্চা সুস্থ্য ও স্বাভাবিক রয়েছে জানান কতৃপক্ষ। তবে সন্তানের ওজন বেড়ে যাওয়ায় দুপুরের মধ্যেই অপারেশন করাতে হবে বলে জানান ডাক্তার লতিফা সুলতানা। কিন্তু ডাক্তার লতিফা সময়ক্ষেপন করে সন্ধ্যার পর অপারেশন করে বাচ্চা প্রসব করান। কিন্তু দীর্ঘ এক ঘন্টা পর্যন্ত নবজাতকে স্বজনদের দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার লতিফা সুলতানা ও তার স্বামী শিশু ডাক্তার রকিকুল ইসলাম রিপন নবজাতকের স্বজনদের জানান এম্বুলেন্স ডাকা হয়েছে দ্রুত শিশুকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতে হবে। এরপর অক্সিজেন ব্যবস্থাহীন এম্বুলেন্সের মাধ্যমে শুধুমাত্র নবজাতকে রাজশাহী নেওয়ার পথে বাঘায় মারা যায় নবজাতক। নবজাতকের স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে এম্বুলেন্সটির গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে।
মৃত নবজাতকের পরিবার সূত্র জানান, মৃত শিশুকে দাফন কাজে বাধা দিয়ে হেলথ কেয়ারের ডাক্তারের সঙ্গে যোগসাজশে এম্বুলেন্স চালক তাদের নিকট থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে।
সূত্রগুলো আরও জানান, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ডাক্তার লতিফা সুলতানা ও তার স্বামী শিশু চিকিৎসক রকিবুল ইসলাম রিপন তড়িঘড়ি করে তাদেরকে ক্লিনিকে ডেকে নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা দিয়ে মিমাংসা করেন। তারপর প্রসূতিকে হেলথ কেয়ার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
মৃত নবজাতকের বাবা আশিকুর রহমান আকাশ বলেন, চরম অবহেলা করে আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আর যেন কোন শিশু হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের চিকিৎক লতিফা সুলতানা ও ডাক্তার রকিবুল ইসলাম রিপনের ভুল ও অপচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করে সেই পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ গ্রহণ করবেন এটাই এখন প্রত্যাশা।
এ ব্যাপারে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার লতিফা সুলতানার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তার স্বামী শিশু চিকিৎসক রকিবুল ইসলাম রিপন বলেন, নবজাতকটি আমার ক্লিনিকে মারা যায়নি। শিশুটির হার্টের সমস্যা থাকায় রাজশাহী মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পথিমধ্যে মারা গেছে। এইজন্য আমাদের কোন দায়ভার নেই। তবে মৃত নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে মিমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ডাক্তার রিপন।
পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এমন ঘটনা ঘটলে ডাক্তার রিপন নিজেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা হিসাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন।
এবিষয়ে পাবনা সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, ঈশ্বরদীর হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের ডাক্তারদের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। নিহত নবজাতকের পরিবার থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কেউ অভিযোগ করলে বা সংবাদ প্রকাশ করা হলে তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।