মাটি কাটা ও সিএনজি স্ট্যান্ডের দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ

- প্রকাশিত সময় ০৮:৪৪:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
- / 21
এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাবনা ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া গোলচত্তর মোড়ে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে মো. মনোয়ারুল ইসলাম মনোয়ার (৫৩) নামে এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ ও কুপিয়ে গুরুতরভাবে জখম করা হয়েছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দাশুড়িয়া নতুন গোলচক্কর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ মনোয়ারুল দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি বলে রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম সুলভ মালিথা। মনোয়ার একই ইউনিয়নের নওদাপাড়া এলাকার আবুল কালাম প্রামানিকের ছেলে।
স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও মোড়ের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর লক্ষ্মীকোলা, দাশুড়িয়া বস্তিপাড়া এলাকায় মাটি কাটা, দাশুড়িয়া মোড়ের সিএনজি স্ট্যান্ড, বাস কাউন্টারসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রিপন প্রামানিক ও তার বড় ভাই স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকু প্রামানিকের সাথে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব বিপুল মোল্লার সংঘর্ষসহ রেশারেশি চলে আসছিল। বিপুল মোল্লার নেতৃত্বে চাঁদপুর লক্ষ্মীকোলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মাটি কাটা হচ্ছে। আর রিপন প্রামানিক ও তার ভাই শ্রমিক নেতা রকু প্রামানিকের নেতৃত্বে দাশুড়িয়ার সিএনজি, অটোরিক্সাসহ বেশ কিছু পয়েন্ট থেকে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছিল।
সূত্র মতে, গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে দাশুড়িয়া সিএনজি স্ট্যান্ডসহ বেশ কিছু স্থান থেকে রিপন ও রকুকে চাঁদা তুলতে বাঁধা দেন বিপুল মোল্লা গ্রুপ। তখন ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রিপন প্রামানিকের বড় ভাই ও স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকু প্রামানিকের সাথে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব বিপুল মোল্লার বাকবিতন্ডা হয়। পরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিপুল মোল্লাসহ তার অনুসারী কয়েকজন আহত হন। এঘটনায় বিপুল মোল্লা গ্রুপের লোকজন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা রকু প্রামানিকের অফিস ভাঙ্গচুর করে। এনিয়ে দু’পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগও দেয়। এসব নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বেশ উত্তেজনা চলছিল।
এই উত্তেজনা নিরোশনের লক্ষ্যে পাবনা জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের নির্দেশে শালিস বৈঠকের মাধ্যমে মিমাংসার কথা বলে রবিবার দুপুরে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুলভ মালিথার বাড়িতে দুই পক্ষকে ডাকা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রিপন প্রামানিক ও তার বড় ভাই শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকু প্রামানিকের নেতৃত্বে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মনোয়ারুল ইসলামের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মনোয়ারের মাথা ও পিঠে কুপিয়ে জখম করে। একইসঙ্গে হামলাকারীরা মনোয়ারকে এলোপাথারিভাবে গুলি করে। এতে দুটি গুলি মনোয়ারের পেটে ও কোমরে বিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা আহত মনোয়ারকে উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটনার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ সুলভ মালিথা জানান, আহত মনোয়ারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ন আহবায়ক ও দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ সুলভ মালিথা জানান, সিএনজি স্ট্যান্ড নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি মনোয়ারুলকে যুবদল নেতা রিপন ও রকুর নেতৃত্বে গুলি করা হয়েছে। এবিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলীয় সাইনবোর্ড নিয়ে কেউ অপকর্মে জড়িত হলে তার দায় দল নেবে না। হামলাকারীরা পাবনা জেলা বিএনপির নেতাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে এই হামলা করেছে।
এদিকে ঈশ্বরদী থানার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ মনোয়ারুলকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধের ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ হয়নি, তবে পূর্বের ঘটনায় দু’পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্রুতই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বর্তমানে দাশুড়িয়া গোলচক্করসহ এর আশেপাশের এলাকাই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে