ঢাকা ০৬:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

জলাবদ্ধতায় হুমকিতে বিনা চাষে সরিষা আবাদ

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৩:১১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৯
  • / 99

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা চলনবিলাঞ্চালের একটি বড় অংশ নিয়ে গঠিত। উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের বিশাকোল গ্রাম থেকে খানমরিচ ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত চার কিলোমিটার সাবমারসিবল সড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে এখনো জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নিলে চলনবিল অধ্যুষিত এসব জমিতে অনিশ্চিত হয়ে পরবে এ বছরের রবিশস্য আবাদ। বর্ষা পরবর্তী এই অঞ্চলে মূলত এই মৌসুমে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করা হয়।

বন্যার পানিতে থাকা পলি জমে উর্বর হয়ে থাকা জমিতে বিনা সারেই প্রচুর ফলন হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বছর এই সড়কে অপরিকল্পিতভাবে সংকীর্ণ ক্রসড্রেন নির্মাণ করায় বন্যার পানি ঠিকমতো নদীতে নামতে পারছে না বলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

গত বছর অষ্টমনীষা ও খানমরিচ ইউনিয়নের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শতাধিক একর ফসলি জমির মধ্য দিয়ে চার কিলোমিটার সাবমারসিবল এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়।

সড়ক নির্মানের ফলে চলনবিলের এই অঞ্চলটুকু ফসলিমাঠ দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়ে। কুড়ি বছর আগে এই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে বর্ষার সময় এখানের কয়েক হাজার একর জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকে।

বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকাকালীন এই অঞ্চলে আমন ধান আবাদ করা গেলেও এখন আর তা সম্ভব হয়না। তবে বর্ষার পরে এই অঞ্চলের চাষীরা বিনা চাষে সরিষা আবাদ করতে পারে দ্রুততম সময়ে।

বন্যায় প্রচুর পলি পড়ায় এসব জমিতে ফলন ভালো হয়। সরিষা ঘরে তুলে কৃষকরা শুরু করে বোরো ধান চাষ। তাই শুষ্ক মৌসুমে এই অঞ্চলের জমিতে ফসল আবাদ করে কৃষকরা জীবিকা নির্বাহ করে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রকৌশল অফিসের অর্থায়নে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সড়ক নির্মাণ করা হয়। মাত্র তিন ফুট চওড়া ১১টি ক্রসড্রেন রেখে এই সড়ক নির্মান করা হয়।

মূলত এই ক্রসড্রেনের মাধ্যমেই সড়কের পশ্চিম পাশের আটকে থাকা পানি নিষ্কাশিত হয়ে পূর্বপাশের জমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাশ্ববর্তী গুমানী নদীতে পতিত হয়।

কিন্তু ক্রসড্রেনগুলো সংকীর্ণ হওয়ায় পানির চাপ থাকা স্বত্তেও পানি খুবই ধীরগতিতে নিষ্কাশিত হচ্ছে। এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, অপ্রয়োজনীয় জায়গায় ক্রসড্রেন নির্মান করা হয়েছে। যেখানে পানির চাপ সেখানে চাপের তুলনায় ক্রসড্রেন অপ্রতুল ফলে এই অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাবমারসিবল সড়কটির পশ্চিম পাশে অষ্টমনীষা ও খানমরিচ ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার একর জমির ওপর তিন ফুট আবার কোথাও এক ফুট পরিমাণ পানি জমে আছে।

সড়কের প‚র্ব পাশে পানি কম থাকলেও সংকীর্ণ ক্রসড্রেন দিয়ে পর্যাপ্ত পানি বের না হওয়ায় সড়কের পশ্চিম পাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সময় দুটি ইউড্রেন মাটিতে ভরাট হয়ে অকার্যকর হয়ে আছে।

এই অঞ্চলের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার বারো/ তেরো বিগে ভুই পানিত তলা লইচে। আমন ধানও আবাদ করবের পারি নাই। এহন আবার পানি থাহায় সরিসেও (সরিষা) বুনবের পারচি নে। শীত বাইরে গেলি তো আর বুনা যাবি নানে।” (আমার ১২/১৩ বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। আমান ধান ও আবাদ করতে পারি নাই।

এখন পানি থাকায় সরিষা বীজও বপন করতে পারছি না। শীত বেড়ে গেলে তো আর চাষই সম্ভব নয়)এই সড়কের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সদ্য বদলি হওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী আফরোজা পারভীন দাবি করেন, সড়ক ও ক্রসড্রেন পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে।

কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অন্যান্য কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান আসদিুর রহমান বলেন, এবার নদীতে পানি প্রবাহ সঠিক ভাবে হচ্ছে না।

আর এই সড়কেও বিষয়ে এমপি মহোদয়ের সাথে কথা বলে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবেউপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, বিষয়টি কৃষি অফিসের একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়।

তাই উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ঠ সকল কর্মর্কতার সাথে কথা বলব। কৃষকদের বাঁচাতে দ্রæত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জলাবদ্ধতায় হুমকিতে বিনা চাষে সরিষা আবাদ

প্রকাশিত সময় ০৩:১১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৯

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা চলনবিলাঞ্চালের একটি বড় অংশ নিয়ে গঠিত। উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের বিশাকোল গ্রাম থেকে খানমরিচ ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত চার কিলোমিটার সাবমারসিবল সড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে এখনো জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নিলে চলনবিল অধ্যুষিত এসব জমিতে অনিশ্চিত হয়ে পরবে এ বছরের রবিশস্য আবাদ। বর্ষা পরবর্তী এই অঞ্চলে মূলত এই মৌসুমে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করা হয়।

বন্যার পানিতে থাকা পলি জমে উর্বর হয়ে থাকা জমিতে বিনা সারেই প্রচুর ফলন হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বছর এই সড়কে অপরিকল্পিতভাবে সংকীর্ণ ক্রসড্রেন নির্মাণ করায় বন্যার পানি ঠিকমতো নদীতে নামতে পারছে না বলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

গত বছর অষ্টমনীষা ও খানমরিচ ইউনিয়নের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শতাধিক একর ফসলি জমির মধ্য দিয়ে চার কিলোমিটার সাবমারসিবল এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়।

সড়ক নির্মানের ফলে চলনবিলের এই অঞ্চলটুকু ফসলিমাঠ দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়ে। কুড়ি বছর আগে এই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে বর্ষার সময় এখানের কয়েক হাজার একর জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকে।

বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকাকালীন এই অঞ্চলে আমন ধান আবাদ করা গেলেও এখন আর তা সম্ভব হয়না। তবে বর্ষার পরে এই অঞ্চলের চাষীরা বিনা চাষে সরিষা আবাদ করতে পারে দ্রুততম সময়ে।

বন্যায় প্রচুর পলি পড়ায় এসব জমিতে ফলন ভালো হয়। সরিষা ঘরে তুলে কৃষকরা শুরু করে বোরো ধান চাষ। তাই শুষ্ক মৌসুমে এই অঞ্চলের জমিতে ফসল আবাদ করে কৃষকরা জীবিকা নির্বাহ করে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রকৌশল অফিসের অর্থায়নে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সড়ক নির্মাণ করা হয়। মাত্র তিন ফুট চওড়া ১১টি ক্রসড্রেন রেখে এই সড়ক নির্মান করা হয়।

মূলত এই ক্রসড্রেনের মাধ্যমেই সড়কের পশ্চিম পাশের আটকে থাকা পানি নিষ্কাশিত হয়ে পূর্বপাশের জমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাশ্ববর্তী গুমানী নদীতে পতিত হয়।

কিন্তু ক্রসড্রেনগুলো সংকীর্ণ হওয়ায় পানির চাপ থাকা স্বত্তেও পানি খুবই ধীরগতিতে নিষ্কাশিত হচ্ছে। এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, অপ্রয়োজনীয় জায়গায় ক্রসড্রেন নির্মান করা হয়েছে। যেখানে পানির চাপ সেখানে চাপের তুলনায় ক্রসড্রেন অপ্রতুল ফলে এই অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাবমারসিবল সড়কটির পশ্চিম পাশে অষ্টমনীষা ও খানমরিচ ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার একর জমির ওপর তিন ফুট আবার কোথাও এক ফুট পরিমাণ পানি জমে আছে।

সড়কের প‚র্ব পাশে পানি কম থাকলেও সংকীর্ণ ক্রসড্রেন দিয়ে পর্যাপ্ত পানি বের না হওয়ায় সড়কের পশ্চিম পাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সময় দুটি ইউড্রেন মাটিতে ভরাট হয়ে অকার্যকর হয়ে আছে।

এই অঞ্চলের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার বারো/ তেরো বিগে ভুই পানিত তলা লইচে। আমন ধানও আবাদ করবের পারি নাই। এহন আবার পানি থাহায় সরিসেও (সরিষা) বুনবের পারচি নে। শীত বাইরে গেলি তো আর বুনা যাবি নানে।” (আমার ১২/১৩ বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। আমান ধান ও আবাদ করতে পারি নাই।

এখন পানি থাকায় সরিষা বীজও বপন করতে পারছি না। শীত বেড়ে গেলে তো আর চাষই সম্ভব নয়)এই সড়কের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সদ্য বদলি হওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী আফরোজা পারভীন দাবি করেন, সড়ক ও ক্রসড্রেন পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে।

কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অন্যান্য কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান আসদিুর রহমান বলেন, এবার নদীতে পানি প্রবাহ সঠিক ভাবে হচ্ছে না।

আর এই সড়কেও বিষয়ে এমপি মহোদয়ের সাথে কথা বলে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবেউপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, বিষয়টি কৃষি অফিসের একার পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়।

তাই উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রæত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ঠ সকল কর্মর্কতার সাথে কথা বলব। কৃষকদের বাঁচাতে দ্রæত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।