ঢাকা ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

স্মৃতিতে ভাস্বর মৃত্যুঞ্জয়ী স্যামসন এইচ চৌধুরী : অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৩:১৮:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০
  • / 100

ছোটবেলায় গাছ গাছালি, লতাপাতা নিয়ে খেলা ছিল যার অভ্যাস। হামানদিস্তায় লতাপাতা পিশে খেলার ছলে ঔষুধ বানিয়ে মজা পেত।

মানুষের হাত পা কেটে গেলে গাছের পাতা ছেঁচে লাগিয়ে দিত। বাবা ছিলেন চিকিৎসক। সে সুবাদেই ওষুধ তৈরির প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রচুর।

লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন সরকারি চাকুরী করেছেন। কিন্তু সে চাকুরি তার ভাল লাগলো না। বাবাকে বললেন টাকা দাও, ব্যবসা করব। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি ফার্মেসী খুললেন।

চিকিৎসায় বাবার খুব সুনাম ছিল। দূর দুরান্ত থেকে লোকজন আসতো। এক সময় দেখলেন এমবিবিএস ডাক্তারের প্রতি রোগীরা বেশি ঝুঁকছে। তার এক বন্ধু ডাক্তার ছিল।

তখন ঐ ডাক্তারকে গিয়ে তিনি বললেন, হাটবারের দিন তার ফার্মেসিতে বসতে হবে। ফলে তার ফার্মেসি বেশ জমে উঠল। এভাবে ওষুধ বিক্রি করতে করতেই হঠাৎ একদিন মাথায় চিন্তা এল। আমার তো ওষুধ তৈরি করতে পারি।

যে কথা সেই কাজ। চার বন্ধু এক সঙ্গে মিলে শুরু করল ওষুধ তৈরির কাজ। ২০-২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ওষুধ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। দেড় বছরে তাদের পুঁজি বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার টাকা। আর চার বছর পর মুনাফা করতে শুরু করেন।

যাকে নিয়ে এই সফল ও স্বপ্নের গল্প তিনি হলেন স্কয়ার গ্র“পের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী।

সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা ও শৃংখলা, সময়জ্ঞান একজন মানুষকে কত উপরে নিয়ে যেতে পারেন তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্কয়ার গ্র“পের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। যিনি প্রচন্ড আস্থা ও মনোবলকে পূঁজি করে শুন্য থেকে শিখরে পৌছেছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। প্রথমে নিজে বাবা ইয়াকুব চৌধুরীর নামের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করেন ‘ই-সনস’ নামক ঔষধ তৈরির কারখানা। পরে বাবার কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে নেমে পড়েন ফার্মেসি ব্যবসায়।

চার বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মেসিউটিক্যাল ওয়ার্কস নামে প্রথম ওষুধ কারখানা।

স্কয়ার আজ বাংলাদেশে শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্র“প। আর এর স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন স্যামসান এইচ চৌধুরী। ৬২ বছর আগে স্যামসান এইচ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার বন্ধু মিলে পাবনা শহরে শালগাড়িয়া এলাকায় যে ছোট্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটি আজ মহিরুহ।

১৯৫৮ সালে যে প্রতিষ্ঠান দিয়ে স্কয়ারের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার নাম ছিল স্কয়ার ফার্মা। পুঁজির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ হাজার টাকা। ১৯৬৪ সালে স্কয়ার ফার্মা নাম পরিবর্তন করে করা হয় স্কয়ার ফর্মাসিউটিক্যাল লিমিেিডট।

ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ছিমছাম ছিল কারখানাটি। এখনও স্কয়ারের প্রত্যকটি কর্মকান্ডে এ ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু সবকিছুর মধ্যে আছে ছিমছামভাব ও স্বচ্ছতা। আছে আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়া।

কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলছে সবকিছু। স্কয়ার নামের মহত্ব আরও অনেক গভীরে। সেদিন চার বন্ধুর আট হাত মিলে গড়ে তুলেছিলেন এক বর্গাকার চতুর্ভুজের।

স্কয়ার মানে হচ্ছে সেই বর্গাকার চতুর্ভূজ। কিন্তু পারফেক্ট না হলে যেমন চতুর্ভূজ বর্গাকার হয় না। তেমনি নৈতিক বিশুদ্ধতা না থাকলে জীবনে সাফল্য আর লাভ করা যায় না।

সেই পারফেক্টের চিন্তা থেকেই তাদের গ্র“পের নামকরণ করা হয় স্কয়ার। এ প্রসঙ্গে স্যামসান এইচ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘স্কয়ার মানেই পারফেকশন। এ জন্যই আমরা নাম রাখলাম স্কয়ার’।

লাইসেন্স পাওয়ার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে স্কয়ার ফার্মেসিটিক্যাল কারখানার মালিক-শ্রমিক সকলের মাঝে। নতুন উদ্যমে স্কয়ারের যাত্রা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এই আমদানীর পরিমাণ ২ কোটিতে বৃদ্ধি পায়। যে কাঁচামাল আমদানী লাইসেন্সের জন্য এক সময় স্যামসন চৌধুরী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

সেই স্কয়ার আজ নিজেই অনেক ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করছে”।

স্যামসন এইচ চৌধুরী দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পঞ্চাশের দশকে ভেবেছেন সমবায় নিয়ে।

সে সময় তার প্রিয় সহকর্মী ছিলেন আমেরিকান ম্যারি মিলনার এবং জিম ওয়েকার।

তিনি ভেবেছেন কৃষি বিপ্লব নিয়েও। ইপিসিসির সাধারণ সম্পাদক থাকাবস্থায় ডেভিড স্টকলিকে নিয়ে এগিয়ে গেছেন ইরি চাষ প্রকল্প, উন্নত ফেজার গরু এবং রোড আইল্যান্ড মুরগি প্রচলন করে।


মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে রিলিফ ক্যাম্পে খাদ্য সরবরাহ করেছেন। বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ গঠনে সিসিডিবি গঠন, আরিচা-ভোলা-পটুয়াখালী-বরিশালের মৎস্যজীবীদের জাল, নৌকা, কোল্ডস্টোর প্রদান, মহেশখালীতে সাগর মৎস্যজীবী, নরসিংদীতে তাঁতিদের পুনর্বাসন, রাজশাহীতে ১২ মিলিয়ন ডলারের কৃষি প্রকল্প, বাংলাদেশ সরকারকে দূরপাল্লার ওয়াকিটকি ও বার্জ প্রদান এবং বরিশাল ও গোপালগঞ্জে ২.৩ মিলিয়ন ডলারের ইপি প্রকল্প প্রণয়ন করেন।

এসব অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি তার কর্মচারীদেরও বঞ্চিত করেননি। জীবিত থাকতে ৫০ হাজার কর্মচারীর জন্য প্রতিদিন দুপুরের খাবার, ভাতা, আকর্ষণীয় বোনাস চালু করে দিয়ে গেছেন, যা এখনও বহাল আছে।

তিনি তাদের সমস্যার কথা শুনতেন, চাহিদাগুলো পূরণ করতেন। তাই তারা কখনও ধর্মঘট করেননি।


তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন না। পুঁজিবাজারে কোনো নয়ছয় করেননি। তার প্রতিষ্ঠানে তিনি ছিলেন অৎাতশত্রæ ও দানবীর। অসংখ্য ছাত্র, দরিদ্র, অনাথ তার সহানুভূতি পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছে।

পাবনায় অনিতা-স্যামসন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের স্থায়ী ব্যবস্থা করে গেছেন তিনি।


সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাবনার ঐতিহাসিক অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি সমৃদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। অসাধারণ সৌজন্যবোধ এবং অমায়িক ব্যবহারের জন্য তিনি ছিলেন সব মানুষের অতি প্রিয়ভাজন।

তার চলনে-বলনে-কথনে ছিল মাধুর্য। তেমনি পোশাক-পরিচ্ছদে তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন। জীবদ্দশায় স্যামসন চৌধুরী অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং তার কীর্তির জন্য বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।

পর পর কয়েক বছর দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন তিনি। পাবনার অনেক বেকার সমস্যার সমাধান, সেখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে অসাধারণ অবদানসহ দেশের শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে তার অবদান ভোলার নয়।

স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্ত্রী অনিতা চৌধুরী। যিনি ৫০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে স্কয়ার মাতা হিসেবে পরিচিত।

তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে স্যামুয়েল এস চৌধুরী (স্বপন চৌধুরী), যিনি বর্তমানে স্কয়ার গ্রæপের চেয়ারম্যান, মেঝ ছেলে তপন চৌধুরী স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালস এবং স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ছোট ছেলে অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু মাছরাঙা টেলিভিশন, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

একমাত্র মেয়ে রতœা পাত্র স্কয়ার গ্রæপের ভাইস চেয়ারম্যান। তারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সু-প্রতিষ্ঠিত। ২০১৬ সালে তিনি মযার্দাপুর্ন একুশে পদকে ভুষিত হন।

৯৮৮ সাল থেকে ওষুধের পাশাপাশি স্কয়ার গ্র“পও নতুন শিল্প স্থাপন শুরু করে। ওই সময়ে স্কয়ার ফার্মার একটি আলাদা বিভাগ হিসাবে স্থাপন করা হয় স্কয়ার ট্রয়লেটিজ লিঃ এর থেকে একে একে স্থগিত হতে থাকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান।

১৯৯৫ সালে স্কয়ার টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। স্কয়ার সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ টেক্সটাইল খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কনজুমার পণ্য। এ দুটি খাতে তাদের প্রভৃতির হার ঈর্ষর্ণীয়।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে স্কয়ার ফার্মেসিউটিক্যাল লিঃ, স্কয়ার স্পিনিংস লিঃ, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিঃ স্কয়ার কনজুমার প্রোডাক্টস লিঃ, স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লি. স্কয়ার ইনফারমেটিক্স লিঃ, স্কয়ার সারাহ নিড ফেব্রিক্স লিঃ, স্কয়ার হসপিটালস লিঃ, স্কয়ার এগ্রো লিঃ, স্কয়ার হারবাল এন্ড নিউট্রিসিটিক্যাল লিঃ, এজিএস সার্ভিসেস লিঃ, মাছরাঙা প্রডাকশন লিঃ, প্যাকেজস লিঃ, বর্ণালী প্রিন্টার্স লিঃ, ও মিডিয়া কম ও মাছরাঙা টেলিভিশন।

এ ছাড়া হাউজিং কোম্পানী শেলটেক, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে স্কয়ার গ্র“পের শেয়ার রয়েছে।


বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কাশীয়ানী থানার আড়–য়াকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তারা বাবা ছিলেন ইয়াকুব হোসেন চৌধুরী। স্যামসন চৌধুরী ভারতে পড়াশুনা শেষ করে ১৯৫২ সালে পাবনা জেলার আতাইকুলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

তার পিতা ছিলেন একটি ফার্মেসীর মেডিকেল অফিসার। ১৯৫৮ সালে চার বন্ধু মিলে আতাইকুলায় গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালস। বর্তমানে স্কয়ার ফার্মায় ২৮ হাজারসহ স্কয়ার গ্র“পের ৫০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে।


স্যামসন চৌধুরী প্রাচীন ঢাকার ম্রেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (এমসিসিআই) এর সাবেক সভাপতি, মাইডাসের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফার্মাসিটিউক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশানের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পাবলিক লিসটেড কোম্পানীজ অ্যাসোসিয়শন, চেয়ারম্যান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লি:, ঢাকা ক্লাবের আজীবন সদস্য, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক, এক্সিকিউটিভ মেম্বর বাংলাদেশ ফ্রাঞ্চ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (আইসিসিআই), উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি, প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ হারবাল প্রোডাক্টস প্রস্তুতকারক সমিতি, চেয়ারম্যান মিউচুয়্যাল ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটেড, সাবেক চেয়ারম্যান ও টাষ্ট্রি (টিআইবি), চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহবাজপুর টি এষ্টেট লি, পাবনা প্রেসক্লাবের জীবন সদস্য ছিলেন।


এ ছাড়া স্যামসন চৌধুরী ১৯৯৮ সালে আমেরিকান চ্ম্বোর কর্তৃক বিসনেজ এক্সিকিউটিভ অব দি ইয়ার, ২০০০- ২০০১ সালে ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল কর্তৃক বেষ্ট এন্টারপ্রেনার অব দি কান্ট্রি, ২০০৩ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক এওয়ার্ড লাভ করেন, ২০০৫ সালে ব্যাংকার্স ফোরাম এওয়ার্ড লাভ করেন, ২০০৬ সালে আইসএবি ন্যাশনাল এওয়ার্ড লাভ করেন, ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে পর পর দুই বছর দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সেরা করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পান। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে সিআইপি মনোনীত হন।

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে তিনি পরলোকগমন করেন। তাকে পাবনা শহরের বৈকন্ঠপুরের বাসভবন এস্ট্রাসে সমাহিত করা হয়।


সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রæপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীকে পাবনা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কাশিপুর খামার বাড়ির (অ্যাস্ট্রাস) পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। পাবনার মানুষের আপনজন স্যামসন এইচ চৌধুরীকে তারা আজও ভুলতে পারেননি।

পথিক এখনও অ্যাষ্ট্রাসের পাশে গিয়ে থমকে দাঁড়ান, নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। আত্মীয়স্বজনের মতো কর্মচারীরা এমনকি পাবনাবাসীও নীরবে চোখের পানি ফেলেন।


দেশের শীর্ষ শিখরে পৌছুলেও ভুলে যাননি অতীত। তিনি পাবনাকে খুব ভাল বাসতেন। তিনি পাবনার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর আধুনিকায়ন করেন। বনমালি ইন্সটিটিউট, পাবনা প্রেসক্লাবসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তিনি সহায়তা করেন। তিনি ছিলেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সম্মানিত জীবন সদস্য।

এ ছাড়া পাবনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তার অবদান। তিনি পরলোকে চলে গেলেও এ সব প্রতিষ্ঠান তাকে স্মরণ করবে চীরকাল।

দেশ বরেণ্য এই শিল্পপতির মৃত্যু দিবসসে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পাবনার এষ্ট্রাস খামার বাড়ীতে প্রার্থণা সভা এবং পাবনা প্রেসক্লাব সহ বিভিন্ন সংগঠন স্মরণ সভার আয়োজন করেছেন।

স্মৃতিতে ভাস্বর মৃত্যুঞ্জয়ী স্যামসন এইচ চৌধুরী : অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত সময় ০৩:১৮:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০

ছোটবেলায় গাছ গাছালি, লতাপাতা নিয়ে খেলা ছিল যার অভ্যাস। হামানদিস্তায় লতাপাতা পিশে খেলার ছলে ঔষুধ বানিয়ে মজা পেত।

মানুষের হাত পা কেটে গেলে গাছের পাতা ছেঁচে লাগিয়ে দিত। বাবা ছিলেন চিকিৎসক। সে সুবাদেই ওষুধ তৈরির প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রচুর।

লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন সরকারি চাকুরী করেছেন। কিন্তু সে চাকুরি তার ভাল লাগলো না। বাবাকে বললেন টাকা দাও, ব্যবসা করব। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি ফার্মেসী খুললেন।

চিকিৎসায় বাবার খুব সুনাম ছিল। দূর দুরান্ত থেকে লোকজন আসতো। এক সময় দেখলেন এমবিবিএস ডাক্তারের প্রতি রোগীরা বেশি ঝুঁকছে। তার এক বন্ধু ডাক্তার ছিল।

তখন ঐ ডাক্তারকে গিয়ে তিনি বললেন, হাটবারের দিন তার ফার্মেসিতে বসতে হবে। ফলে তার ফার্মেসি বেশ জমে উঠল। এভাবে ওষুধ বিক্রি করতে করতেই হঠাৎ একদিন মাথায় চিন্তা এল। আমার তো ওষুধ তৈরি করতে পারি।

যে কথা সেই কাজ। চার বন্ধু এক সঙ্গে মিলে শুরু করল ওষুধ তৈরির কাজ। ২০-২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ওষুধ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। দেড় বছরে তাদের পুঁজি বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার টাকা। আর চার বছর পর মুনাফা করতে শুরু করেন।

যাকে নিয়ে এই সফল ও স্বপ্নের গল্প তিনি হলেন স্কয়ার গ্র“পের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী।

সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা ও শৃংখলা, সময়জ্ঞান একজন মানুষকে কত উপরে নিয়ে যেতে পারেন তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্কয়ার গ্র“পের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী। যিনি প্রচন্ড আস্থা ও মনোবলকে পূঁজি করে শুন্য থেকে শিখরে পৌছেছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। প্রথমে নিজে বাবা ইয়াকুব চৌধুরীর নামের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করেন ‘ই-সনস’ নামক ঔষধ তৈরির কারখানা। পরে বাবার কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে নেমে পড়েন ফার্মেসি ব্যবসায়।

চার বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মেসিউটিক্যাল ওয়ার্কস নামে প্রথম ওষুধ কারখানা।

স্কয়ার আজ বাংলাদেশে শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্র“প। আর এর স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন স্যামসান এইচ চৌধুরী। ৬২ বছর আগে স্যামসান এইচ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার বন্ধু মিলে পাবনা শহরে শালগাড়িয়া এলাকায় যে ছোট্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেটি আজ মহিরুহ।

১৯৫৮ সালে যে প্রতিষ্ঠান দিয়ে স্কয়ারের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার নাম ছিল স্কয়ার ফার্মা। পুঁজির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ হাজার টাকা। ১৯৬৪ সালে স্কয়ার ফার্মা নাম পরিবর্তন করে করা হয় স্কয়ার ফর্মাসিউটিক্যাল লিমিেিডট।

ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ছিমছাম ছিল কারখানাটি। এখনও স্কয়ারের প্রত্যকটি কর্মকান্ডে এ ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু সবকিছুর মধ্যে আছে ছিমছামভাব ও স্বচ্ছতা। আছে আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়া।

কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলছে সবকিছু। স্কয়ার নামের মহত্ব আরও অনেক গভীরে। সেদিন চার বন্ধুর আট হাত মিলে গড়ে তুলেছিলেন এক বর্গাকার চতুর্ভুজের।

স্কয়ার মানে হচ্ছে সেই বর্গাকার চতুর্ভূজ। কিন্তু পারফেক্ট না হলে যেমন চতুর্ভূজ বর্গাকার হয় না। তেমনি নৈতিক বিশুদ্ধতা না থাকলে জীবনে সাফল্য আর লাভ করা যায় না।

সেই পারফেক্টের চিন্তা থেকেই তাদের গ্র“পের নামকরণ করা হয় স্কয়ার। এ প্রসঙ্গে স্যামসান এইচ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘স্কয়ার মানেই পারফেকশন। এ জন্যই আমরা নাম রাখলাম স্কয়ার’।

লাইসেন্স পাওয়ার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে স্কয়ার ফার্মেসিটিক্যাল কারখানার মালিক-শ্রমিক সকলের মাঝে। নতুন উদ্যমে স্কয়ারের যাত্রা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এই আমদানীর পরিমাণ ২ কোটিতে বৃদ্ধি পায়। যে কাঁচামাল আমদানী লাইসেন্সের জন্য এক সময় স্যামসন চৌধুরী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

সেই স্কয়ার আজ নিজেই অনেক ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করছে”।

স্যামসন এইচ চৌধুরী দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পঞ্চাশের দশকে ভেবেছেন সমবায় নিয়ে।

সে সময় তার প্রিয় সহকর্মী ছিলেন আমেরিকান ম্যারি মিলনার এবং জিম ওয়েকার।

তিনি ভেবেছেন কৃষি বিপ্লব নিয়েও। ইপিসিসির সাধারণ সম্পাদক থাকাবস্থায় ডেভিড স্টকলিকে নিয়ে এগিয়ে গেছেন ইরি চাষ প্রকল্প, উন্নত ফেজার গরু এবং রোড আইল্যান্ড মুরগি প্রচলন করে।


মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে রিলিফ ক্যাম্পে খাদ্য সরবরাহ করেছেন। বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ গঠনে সিসিডিবি গঠন, আরিচা-ভোলা-পটুয়াখালী-বরিশালের মৎস্যজীবীদের জাল, নৌকা, কোল্ডস্টোর প্রদান, মহেশখালীতে সাগর মৎস্যজীবী, নরসিংদীতে তাঁতিদের পুনর্বাসন, রাজশাহীতে ১২ মিলিয়ন ডলারের কৃষি প্রকল্প, বাংলাদেশ সরকারকে দূরপাল্লার ওয়াকিটকি ও বার্জ প্রদান এবং বরিশাল ও গোপালগঞ্জে ২.৩ মিলিয়ন ডলারের ইপি প্রকল্প প্রণয়ন করেন।

এসব অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি তার কর্মচারীদেরও বঞ্চিত করেননি। জীবিত থাকতে ৫০ হাজার কর্মচারীর জন্য প্রতিদিন দুপুরের খাবার, ভাতা, আকর্ষণীয় বোনাস চালু করে দিয়ে গেছেন, যা এখনও বহাল আছে।

তিনি তাদের সমস্যার কথা শুনতেন, চাহিদাগুলো পূরণ করতেন। তাই তারা কখনও ধর্মঘট করেননি।


তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন না। পুঁজিবাজারে কোনো নয়ছয় করেননি। তার প্রতিষ্ঠানে তিনি ছিলেন অৎাতশত্রæ ও দানবীর। অসংখ্য ছাত্র, দরিদ্র, অনাথ তার সহানুভূতি পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছে।

পাবনায় অনিতা-স্যামসন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের স্থায়ী ব্যবস্থা করে গেছেন তিনি।


সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাবনার ঐতিহাসিক অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি সমৃদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। অসাধারণ সৌজন্যবোধ এবং অমায়িক ব্যবহারের জন্য তিনি ছিলেন সব মানুষের অতি প্রিয়ভাজন।

তার চলনে-বলনে-কথনে ছিল মাধুর্য। তেমনি পোশাক-পরিচ্ছদে তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন। জীবদ্দশায় স্যামসন চৌধুরী অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং তার কীর্তির জন্য বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।

পর পর কয়েক বছর দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন তিনি। পাবনার অনেক বেকার সমস্যার সমাধান, সেখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে অসাধারণ অবদানসহ দেশের শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে তার অবদান ভোলার নয়।

স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্ত্রী অনিতা চৌধুরী। যিনি ৫০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে স্কয়ার মাতা হিসেবে পরিচিত।

তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে স্যামুয়েল এস চৌধুরী (স্বপন চৌধুরী), যিনি বর্তমানে স্কয়ার গ্রæপের চেয়ারম্যান, মেঝ ছেলে তপন চৌধুরী স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালস এবং স্কয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ছোট ছেলে অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু মাছরাঙা টেলিভিশন, স্কয়ার টয়লেট্রিজ, স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

একমাত্র মেয়ে রতœা পাত্র স্কয়ার গ্রæপের ভাইস চেয়ারম্যান। তারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সু-প্রতিষ্ঠিত। ২০১৬ সালে তিনি মযার্দাপুর্ন একুশে পদকে ভুষিত হন।

৯৮৮ সাল থেকে ওষুধের পাশাপাশি স্কয়ার গ্র“পও নতুন শিল্প স্থাপন শুরু করে। ওই সময়ে স্কয়ার ফার্মার একটি আলাদা বিভাগ হিসাবে স্থাপন করা হয় স্কয়ার ট্রয়লেটিজ লিঃ এর থেকে একে একে স্থগিত হতে থাকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান।

১৯৯৫ সালে স্কয়ার টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। স্কয়ার সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ টেক্সটাইল খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কনজুমার পণ্য। এ দুটি খাতে তাদের প্রভৃতির হার ঈর্ষর্ণীয়।

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে স্কয়ার ফার্মেসিউটিক্যাল লিঃ, স্কয়ার স্পিনিংস লিঃ, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিঃ স্কয়ার কনজুমার প্রোডাক্টস লিঃ, স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লি. স্কয়ার ইনফারমেটিক্স লিঃ, স্কয়ার সারাহ নিড ফেব্রিক্স লিঃ, স্কয়ার হসপিটালস লিঃ, স্কয়ার এগ্রো লিঃ, স্কয়ার হারবাল এন্ড নিউট্রিসিটিক্যাল লিঃ, এজিএস সার্ভিসেস লিঃ, মাছরাঙা প্রডাকশন লিঃ, প্যাকেজস লিঃ, বর্ণালী প্রিন্টার্স লিঃ, ও মিডিয়া কম ও মাছরাঙা টেলিভিশন।

এ ছাড়া হাউজিং কোম্পানী শেলটেক, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে স্কয়ার গ্র“পের শেয়ার রয়েছে।


বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কাশীয়ানী থানার আড়–য়াকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তারা বাবা ছিলেন ইয়াকুব হোসেন চৌধুরী। স্যামসন চৌধুরী ভারতে পড়াশুনা শেষ করে ১৯৫২ সালে পাবনা জেলার আতাইকুলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

তার পিতা ছিলেন একটি ফার্মেসীর মেডিকেল অফিসার। ১৯৫৮ সালে চার বন্ধু মিলে আতাইকুলায় গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালস। বর্তমানে স্কয়ার ফার্মায় ২৮ হাজারসহ স্কয়ার গ্র“পের ৫০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে।


স্যামসন চৌধুরী প্রাচীন ঢাকার ম্রেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (এমসিসিআই) এর সাবেক সভাপতি, মাইডাসের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফার্মাসিটিউক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশানের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পাবলিক লিসটেড কোম্পানীজ অ্যাসোসিয়শন, চেয়ারম্যান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লি:, ঢাকা ক্লাবের আজীবন সদস্য, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক, এক্সিকিউটিভ মেম্বর বাংলাদেশ ফ্রাঞ্চ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (আইসিসিআই), উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি, প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ হারবাল প্রোডাক্টস প্রস্তুতকারক সমিতি, চেয়ারম্যান মিউচুয়্যাল ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটেড, সাবেক চেয়ারম্যান ও টাষ্ট্রি (টিআইবি), চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহবাজপুর টি এষ্টেট লি, পাবনা প্রেসক্লাবের জীবন সদস্য ছিলেন।


এ ছাড়া স্যামসন চৌধুরী ১৯৯৮ সালে আমেরিকান চ্ম্বোর কর্তৃক বিসনেজ এক্সিকিউটিভ অব দি ইয়ার, ২০০০- ২০০১ সালে ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল কর্তৃক বেষ্ট এন্টারপ্রেনার অব দি কান্ট্রি, ২০০৩ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক এওয়ার্ড লাভ করেন, ২০০৫ সালে ব্যাংকার্স ফোরাম এওয়ার্ড লাভ করেন, ২০০৬ সালে আইসএবি ন্যাশনাল এওয়ার্ড লাভ করেন, ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে পর পর দুই বছর দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সেরা করদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পান। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে সিআইপি মনোনীত হন।

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে তিনি পরলোকগমন করেন। তাকে পাবনা শহরের বৈকন্ঠপুরের বাসভবন এস্ট্রাসে সমাহিত করা হয়।


সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান স্কয়ার গ্রæপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীকে পাবনা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কাশিপুর খামার বাড়ির (অ্যাস্ট্রাস) পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। পাবনার মানুষের আপনজন স্যামসন এইচ চৌধুরীকে তারা আজও ভুলতে পারেননি।

পথিক এখনও অ্যাষ্ট্রাসের পাশে গিয়ে থমকে দাঁড়ান, নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। আত্মীয়স্বজনের মতো কর্মচারীরা এমনকি পাবনাবাসীও নীরবে চোখের পানি ফেলেন।


দেশের শীর্ষ শিখরে পৌছুলেও ভুলে যাননি অতীত। তিনি পাবনাকে খুব ভাল বাসতেন। তিনি পাবনার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর আধুনিকায়ন করেন। বনমালি ইন্সটিটিউট, পাবনা প্রেসক্লাবসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তিনি সহায়তা করেন। তিনি ছিলেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সম্মানিত জীবন সদস্য।

এ ছাড়া পাবনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তার অবদান। তিনি পরলোকে চলে গেলেও এ সব প্রতিষ্ঠান তাকে স্মরণ করবে চীরকাল।

দেশ বরেণ্য এই শিল্পপতির মৃত্যু দিবসসে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পাবনার এষ্ট্রাস খামার বাড়ীতে প্রার্থণা সভা এবং পাবনা প্রেসক্লাব সহ বিভিন্ন সংগঠন স্মরণ সভার আয়োজন করেছেন।