সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ বাড়বে: চাক শ্যুমার
- প্রকাশিত সময় ১২:১৮:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২০
- / 132
‘সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ বাড়বে’ – ইউএস সিনেটে বিরোধী দলীয় নেতা চাক শ্যুমার : প্রবাসীরা ‘বছরের সেরা সিনেটর’র পুরস্কার দিলেন চাক শ্যুমারকে।
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট বিরোধী দলীয় নেতা নিউইয়র্কের সিনেটর চাক শ্যুমারকে ‘বছরের সেরা সিনেটর’র অ্যাওয়ার্ড দিলো বাংলাদেশি আমেরিকানরা। গত শনিবার রাতে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি পার্টি হলে সর্বস্তরের প্রবাসীদের এই সমাবেশের যৌথ আয়োজক ছিল ‘নিউ আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক ক্লাব’, ‘নিউ আমেরিকান ইয়ুথ ফোরাম’ এবং ‘নিউ আমেরিকান উইমেন্স ফোরাম’। খবর বাপসনিউজ।
ডেমক্র্যাটিক পার্টির তৃণমূলের সংগঠন হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে কর্মরত এসব সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোর্শেদ আলম (৬৩)এর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এই প্রথম কোন ইউএস সিনেটরের বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠানে আগমণ ঘটলো। সিনেটর শ্যুমারও আনন্দে আত্মহারা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃস্থানীয়দের বিপুল সমাগম দেখে। দু’হাত উঁচুতে উঠিয়ে অ্যাওয়ার্ড সকলকে দেখিয়ে সিনেটর শ্যুমার বলেন, ‘এই সম্মান আমাকে আরো অভিবাসনবান্ধব হতে উৎসাহিত করবে’। ‘নবম বার্ষিক ডিনার এবং ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ’ সমাবেশে সিনেটর চাক শ্যুমারের উপস্থিতির পর আনন্দে নেচে উঠে গোটা মিলনায়তন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসীরা বিপুল করতালিতে তাকে অভিবাদন জানান। এ সময় মাইক হাতে নিয়ে সিনেটর শ্যুমারকে স্বাগত জানান এই এলাকার কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং।
হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত সর্বকালের সবচেয়ে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার থাকার পাশাপাশি আমেরিকান নীতি-নৈতিকতার পরিপূরক কাজে নিয়োজিত থাকার জন্যে চাক শ্যুমারকে ‘বছরের সেরা সিনেটর’র পুরস্কার দেয়া হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন এবং ইয়ুথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট আহনাফ আলমকে পাশে নিয়ে মোর্শেদ আলম সিনেটর শ্যুমারকে এই পুরস্কার প্রদান করেন। এ সময় মঞ্চে ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং এবং ইভ্যাটি ডি ক্লার্কসহ নিউ আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক ক্লাবের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ ।
১৯৯৮ সাল থেকেই নির্বাচিত সিনেটর চাক শ্যুমার (৬৯) পুরস্কার গ্রহণের প্রাক্কালে প্রদত্ত বক্তব্যে বাংলাদেশিদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমার মত সকলেই আমেরিকায় এসেছেন নিজের ভাগ্য গড়তে। পাশাপাশি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তারা এই আমেরিকাকে গড়েছেন। আমি সবচেয়ে আনন্দিত যে, বাংলাদেশিদের সন্তানেরা খুব ভালো রেজাল্ট দেখাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সে আলোকে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাও একদিন হোয়াইট হাউজ এবং কংগ্রেসে আসন নিতে সক্ষম হবে।’
সিনেটর শ্যুমার উল্লেখ করেন, ‘নিউইয়র্কের বাংলাদেশিদের আমি অভিবাদন জানাতে চাই, হোয়াইট হাউজের অথর্ব নেতৃত্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমেরিকাকে সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাকে সমর্থন দেয়ার জন্য। আমি বলতে চাই যে, আপনারাই হলেন আমেরিকার ভবিষ্যৎ। আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করি, আমেরিকার যে কোন সিটি অথবা অঙ্গরাজ্যের চেয়ে নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি বসতি গড়েছেন।’
এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অ-আমেরিকান পদক্ষেপের প্রতি ইঙ্গিত করে সিনেটর শ্যুমার অভিবাসী সমাজকে স্বস্তি দিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি সামনের নির্বাচনে সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে সক্ষম হই, তাহলে অভিবাসন আইন ঢেলে সাজাবো। আরো বেশি বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথ সুগম হবে। কারণ আমি নিজেও অভিবাসনে বিশ্বাসী।’
প্রাণঢালা শুভেচ্ছায় সিক্ত সিনেটর বলেন, ‘যতদিন আমি সিনেটের মেম্বর হিসেবে থাকবো, ততদিনই বাংলাদেশিদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি। আমি নিশ্চিত যে, আপনারাও আমাকে সমর্থন দিয়ে যাবেন। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যে, এই কুইন্সে তথা নিউইয়র্কে অর্থাৎ সমগ্র আমেরিকায় বাংলাদেশিরা ক্রমান্বয়ে সুসংহত হবেন।’
এর আগে, জ্যামাইকা-ফ্লাশিং নিয়ে গঠিত কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৬ এর কংগ্রেসওম্যান (ডেমক্র্যাট) গ্রেস মেং এবং ব্রুকলীনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডসহ ফ্লাটবুশ এলাকা নিয়ে গঠিত কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৯ এর কংগ্রেসওম্যান (ডেমক্র্যাট)ইভেটি ডি ক্লার্ক শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কংগ্রেস এবং রাজ্য প্রশাসনে নিজেদের হিস্যা আদায়ের পথ সুগম করার আহ্বান জানান।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা ‘মুজিববর্ষ’ আলোকে বিস্তারিত অবহিত করেন তার বক্তব্যে। নানা কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দিপ্ত প্রত্যয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে সেটি উল্লেখ করলে সিনেটর শ্যুমার তাকে অভিনন্দিত করেন। সাদিয়া সিনেটরকে ধন্যবাদ জানান প্রবাসীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করার জন্যে। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারী ক্ষমতায়নের প্রতি উদারতা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কন্সাল জেনারেল সাদিয়া বলেন, নিউইয়র্কে প্রথম নারী কন্সাল জেনারেল হিসেবে আমি কর্মরত রয়েছি। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবেও একজন নারী অতি সম্প্রতি যোগদান করেছেন। এটি জেনে ‘সেল্যুট বাংলাদেশ’ উল্লেখ করেন সিনেটর শ্যুমার।
কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং বলেছেন, ইউএস সেনসাসে সকলকে নিতে হবে নিজ নিজ হিস্যা আদায়ের পথ সুগম রাখতে। লোক গণনায় অংশ না নিলে ফেডারেল প্রশাসনের কাছে কোন তথ্যই থাকবে না কতজন বাংলাদেশি বাস করছেন এই আমেরিকায়। এ প্রসঙ্গে কুইন্স ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এ্যাট লার্জ এটর্নী মইণ চৌধুরী বলেছেন, সেনসাসে অংশগ্রহণের ফরম পূরণে সকলকেই ‘বাংলাদেশি আমেরিকান’ শব্দটি উল্লেখ করতে হবে। তাহলেই সরকারী পরিসংখ্যানে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশিদের অবস্থান স্পষ্ট হবে। শুভেচ্ছা বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা-বিজ্ঞানী ড. নূরন্নবী বলেছেন, ‘আজকের এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কের প্রবাসীরা মূলধারায় আরো জোরালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে সক্ষম হবে।’
উৎসবের মেজাজে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ একটি টেবিল নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। সচরাচর যা চোখে পড়ে না। মিডিয়ার জন্যও ছিল আলাদা টেবিল।
পল, নূসরাত এবং উদিসার সাবলিল উপস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নিউ আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মোর্শেদ আলম, ইয়ুথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট আহনাফ আলম এবং নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ আল আমিন। উইমেন ফোরামের পক্ষে কথা বলেন নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট শিরিন কামাল এবং নির্বাহী পরিচালক রুমানা জেসমীন।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটির সার্বিক এগিয়ে চলার পথে সহায়তাকারি কয়েকজনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ছিলেন ‘বছরের সেরা বিজ্ঞানী’ হিসেবে ড. জিনাত নবী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অপরিসীম আবদানের জন্যে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, বছরের সেরা বাংলাদেশি-আমেরিকান রাজনীতিক হিসেবে হেলালুল করিম, ‘নিউ আমেরিকান লিডার’ হিসেবে শাহনেওয়াজ, ‘নারী উদ্যোক্তা’ হিসেবে শায়লা আজিম প্রমুখকে।
হাকিকুল ইসলাম খোকন
নিউইয়র্ক।