ঢাকা ০৩:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

করোনা ভাইরাসঃ আতঙ্ক নয় সতর্ক থাকুন

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ০৮:১৭:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / 218

সম্প্রতি নতুন একটি ভাইরাসের খবরে বিশ্ববাসী উদ্বিগ্ন। উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

অবাধ তথ্য প্রবাহ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সুদুর চীন দেশে সংক্রমিত এ ভাইরাসের খবর এদেশের গ্রাম গঞ্জের মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণের চেয়ে হাজারগুণ দ্রুত ছড়াচ্ছে এর খবর। আতঙ্কিত হচ্ছে মানুষ, ছুটছে দিগ্বিদিক, চলছে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং একই সাথে বিভিন্ন সমালোচনা।

বাংলাদেশে এ ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটুক তার আগে এ ভাইরাসের স্বরুপ বিশ্লেষনের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। ভাইরাসটির নাম করোনা ভাইরাস। এর আরেক নাম (২০১৯ এনওভিসি), এর অনেক প্রজাতি আছে, তবে মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে এর সাতটি প্রজাতি। এর ছয়টি প্রজাতি আগে থেকে পরিচিত থাকলেও এখন যে ভাইরাসটির দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তা সম্পূর্ণ নতুন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন ভাইরাসটি হয়তো ইতোমধ্যে মানুষের দেহকোষের ভিতরে ঢুকে মিউটেশন ঘটাচ্ছে, অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে সংখ্যাবৃদ্ধি করছে যার ফলে এটি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর উৎস কোনো প্রাণি।

মানুষের দেহে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে চীনের উহান শহরে যেখানে সামুদ্রিক মাছ পাইকারী বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে। বেশিরভাগ করোনা ভাইরাসই বিপজ্জনক তবে অপরিচিত এই ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

জ্বর, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান লক্ষণ। এ ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছাড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা কাশির মতোই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচদিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ জ্বর, এরপর দেখা যাবে শুকনো কাশি, নিউমোনিয়া, অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাস কষ্ট এবং তখন কোনো কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে দুই শতাংশ মারা গেছে। হয়তো মৃত্যু হতে পারে আরও। তাছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা সনাক্ত করা হয়নি। তাই এই ভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়াতে পারে এবং বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।

ইতোমধ্যে চীনে মহামারীর রূপ নিয়েছে করোনা ভাইরাস। উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা চারশ এর কাছাকাছি। চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার জন।

চীনের বাইরেও থাইল্যান্ড, জাপান, তাইওয়ান, আমেরিকা, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, হংকং,ম্যাকাউ, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ ২৩টি দেশে এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে।

লুনার নিউ ইয়ার বা চন্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে যখন লাখ লাখ মানুষ চীন ভ্রমণ করে তখন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কত হতে পারে তা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভাইরাস যেন দ্রুত না ছড়াতে পারে তার জন্য বিশ্বের অনেক বিমানবন্দরেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার কোনো খবর পাওয়া যায়নি তবে ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্সটিউট অব ইপিডেমিওলোজি, ডিজেস কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)। স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে স্থাপিত হেলথ ডেস্কে এসব কর্মীদেরকে পাঠানো হচ্ছে। যেসব ফ্লাইট চীন থেকে আসছে, সেসব যাত্রীদের স্ক্যান করা হচ্ছে।

এছাড়া বিমানবন্দরের এভিয়েশন, ইমিগ্রেশন ও এয়ারলাইনসের কর্মীদের সচেতন করছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। আইইডিসিআর চারটি হটলাইনও খুলেছে। হট লাইনের নম্বরসমূহ: (+৮৮) ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ এবং ০১৯২৭৭১১৭৮৫। দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ এবং বিমানবন্দরসমূহে ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্কতা ও নজরদারী জোরদার করা হয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রবেশ পথে করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করতে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশেষ পোশাক (পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট, পিপিই) মজুদ রাখা হয়েছে।

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমন হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেশের সকল জেলার জেলা প্রশাসক এবং সিভিল সার্জনকে সতর্কতা অবলম্বন ও সম্ভাব্য সংক্রমনে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকতে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আইইডিসিআর এর নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে এ ভাইরাস সনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানবন্দরে যে এলইডি মঞ্চটি রয়েছে তাতে এ রোগের লক্ষণগুলি জানানো হচ্ছে এবং কারো যদি এ লক্ষণগুলো দেখা যায় তবে হেলথ ডেস্কে যোগাযোগের জন্য বলা হচ্ছে।

চীনের উহান শহর এবং অন্যন্য স্থানে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ৩১২ জন বাংলাদেশীকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে চীনের উহান শহর থেকে ফেরত আনা হয়েছে। এদের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় ৭ জনকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও একজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদেরকে আশকোনা হজক্যাম্পে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চীন ফেরত এসব বাংলাদেশী নাগরিকদের সকলেই সুস্থ্য রয়েছে।

যেহেতু এ ভাইরাসটি নতুন তাই এর চিকিৎসার জন্য কোন টিকা/ভ্যাকসিন নেই এবং এমন কোন চিকিৎসা নেই যা এই রোগ ঠেকাতে পারে। তাই এ ভাইরাস হতে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বা এই ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

বার বার ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পড়া এবং বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিতে হবে। জীবিত বা মৃত গৃহপালিত কিংবা বন্য প্রাণি হতে দুরে থাকতে হবে। হাঁচি-কাশি দেবার সময় অবশ্যই মুখে গামছা বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। এক কথায় করোনা ভাইরাস হতে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় অন্যের সাথে (মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণি) সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং পরিচ্ছন্ন থাকা।

করোনা ভাইরাস প্রাণঘাতি এবং এর কোনো চিকিৎসা না থাকলেও আশার কথা হলো এই যে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন এর আক্রমন হতে আমাদের রক্ষা করতে পারে।

শীতের সময়গুলিতে এর সংক্রমন দ্রুত ছাড়ালেও গরম পড়ার সাথে সাথে সংক্রমন হার হ্রাস পাবে। ব্যাপক জনসচেনতা, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ও সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা সফল হবো এমন প্রত্যাশা সকলের।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এদেশে করোনা ভাইরাসের মতো যে কোন ফ্লু মহামারীর রূপ ধারণ করতে পারে। কিন্তু সরকার যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় সর্তকতা অবলম্বন করেছে। এ মুহুর্তে এদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোন সম্ভাবনা নেই এবং এতে আতঙ্কিত হবারও কিছু নেই।

প্রয়োজনীয় সতর্কতা, সচেতনতা এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য আক্রমণ হতে রক্ষা পাবার অন্যতম উপায়। তাই আমাদের সবার উচিত আতঙ্কিত না হয়ে এর আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করা।

ডা. এ কে এম ফরহাদ হোসাইন

করোনা ভাইরাসঃ আতঙ্ক নয় সতর্ক থাকুন

প্রকাশিত সময় ০৮:১৭:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০

সম্প্রতি নতুন একটি ভাইরাসের খবরে বিশ্ববাসী উদ্বিগ্ন। উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

অবাধ তথ্য প্রবাহ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে সুদুর চীন দেশে সংক্রমিত এ ভাইরাসের খবর এদেশের গ্রাম গঞ্জের মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণের চেয়ে হাজারগুণ দ্রুত ছড়াচ্ছে এর খবর। আতঙ্কিত হচ্ছে মানুষ, ছুটছে দিগ্বিদিক, চলছে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং একই সাথে বিভিন্ন সমালোচনা।

বাংলাদেশে এ ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটুক তার আগে এ ভাইরাসের স্বরুপ বিশ্লেষনের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। ভাইরাসটির নাম করোনা ভাইরাস। এর আরেক নাম (২০১৯ এনওভিসি), এর অনেক প্রজাতি আছে, তবে মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে এর সাতটি প্রজাতি। এর ছয়টি প্রজাতি আগে থেকে পরিচিত থাকলেও এখন যে ভাইরাসটির দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তা সম্পূর্ণ নতুন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন ভাইরাসটি হয়তো ইতোমধ্যে মানুষের দেহকোষের ভিতরে ঢুকে মিউটেশন ঘটাচ্ছে, অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে সংখ্যাবৃদ্ধি করছে যার ফলে এটি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর উৎস কোনো প্রাণি।

মানুষের দেহে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে চীনের উহান শহরে যেখানে সামুদ্রিক মাছ পাইকারী বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে। বেশিরভাগ করোনা ভাইরাসই বিপজ্জনক তবে অপরিচিত এই ভাইরাসটি ভাইরাল নিউমোনিয়াকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

জ্বর, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান লক্ষণ। এ ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছাড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠাণ্ডা কাশির মতোই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচদিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ জ্বর, এরপর দেখা যাবে শুকনো কাশি, নিউমোনিয়া, অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাস কষ্ট এবং তখন কোনো কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে দুই শতাংশ মারা গেছে। হয়তো মৃত্যু হতে পারে আরও। তাছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা সনাক্ত করা হয়নি। তাই এই ভাইরাস কতটা ভয়ঙ্কর তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়াতে পারে এবং বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।

ইতোমধ্যে চীনে মহামারীর রূপ নিয়েছে করোনা ভাইরাস। উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা চারশ এর কাছাকাছি। চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার জন।

চীনের বাইরেও থাইল্যান্ড, জাপান, তাইওয়ান, আমেরিকা, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, হংকং,ম্যাকাউ, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ ২৩টি দেশে এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে।

লুনার নিউ ইয়ার বা চন্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে যখন লাখ লাখ মানুষ চীন ভ্রমণ করে তখন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কত হতে পারে তা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভাইরাস যেন দ্রুত না ছড়াতে পারে তার জন্য বিশ্বের অনেক বিমানবন্দরেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবার কোনো খবর পাওয়া যায়নি তবে ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্সটিউট অব ইপিডেমিওলোজি, ডিজেস কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)। স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে স্থাপিত হেলথ ডেস্কে এসব কর্মীদেরকে পাঠানো হচ্ছে। যেসব ফ্লাইট চীন থেকে আসছে, সেসব যাত্রীদের স্ক্যান করা হচ্ছে।

এছাড়া বিমানবন্দরের এভিয়েশন, ইমিগ্রেশন ও এয়ারলাইনসের কর্মীদের সচেতন করছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। আইইডিসিআর চারটি হটলাইনও খুলেছে। হট লাইনের নম্বরসমূহ: (+৮৮) ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ এবং ০১৯২৭৭১১৭৮৫। দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ এবং বিমানবন্দরসমূহে ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্কতা ও নজরদারী জোরদার করা হয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রবেশ পথে করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করতে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশেষ পোশাক (পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট, পিপিই) মজুদ রাখা হয়েছে।

ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমন হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেশের সকল জেলার জেলা প্রশাসক এবং সিভিল সার্জনকে সতর্কতা অবলম্বন ও সম্ভাব্য সংক্রমনে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকতে প্রয়োজনীয় নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আইইডিসিআর এর নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে এ ভাইরাস সনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানবন্দরে যে এলইডি মঞ্চটি রয়েছে তাতে এ রোগের লক্ষণগুলি জানানো হচ্ছে এবং কারো যদি এ লক্ষণগুলো দেখা যায় তবে হেলথ ডেস্কে যোগাযোগের জন্য বলা হচ্ছে।

চীনের উহান শহর এবং অন্যন্য স্থানে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ৩১২ জন বাংলাদেশীকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে চীনের উহান শহর থেকে ফেরত আনা হয়েছে। এদের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় ৭ জনকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও একজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদেরকে আশকোনা হজক্যাম্পে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চীন ফেরত এসব বাংলাদেশী নাগরিকদের সকলেই সুস্থ্য রয়েছে।

যেহেতু এ ভাইরাসটি নতুন তাই এর চিকিৎসার জন্য কোন টিকা/ভ্যাকসিন নেই এবং এমন কোন চিকিৎসা নেই যা এই রোগ ঠেকাতে পারে। তাই এ ভাইরাস হতে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বা এই ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

বার বার ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পড়া এবং বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিতে হবে। জীবিত বা মৃত গৃহপালিত কিংবা বন্য প্রাণি হতে দুরে থাকতে হবে। হাঁচি-কাশি দেবার সময় অবশ্যই মুখে গামছা বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। এক কথায় করোনা ভাইরাস হতে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় অন্যের সাথে (মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণি) সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা এবং পরিচ্ছন্ন থাকা।

করোনা ভাইরাস প্রাণঘাতি এবং এর কোনো চিকিৎসা না থাকলেও আশার কথা হলো এই যে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন এর আক্রমন হতে আমাদের রক্ষা করতে পারে।

শীতের সময়গুলিতে এর সংক্রমন দ্রুত ছাড়ালেও গরম পড়ার সাথে সাথে সংক্রমন হার হ্রাস পাবে। ব্যাপক জনসচেনতা, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ও সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা সফল হবো এমন প্রত্যাশা সকলের।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এদেশে করোনা ভাইরাসের মতো যে কোন ফ্লু মহামারীর রূপ ধারণ করতে পারে। কিন্তু সরকার যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় সর্তকতা অবলম্বন করেছে। এ মুহুর্তে এদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কোন সম্ভাবনা নেই এবং এতে আতঙ্কিত হবারও কিছু নেই।

প্রয়োজনীয় সতর্কতা, সচেতনতা এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য আক্রমণ হতে রক্ষা পাবার অন্যতম উপায়। তাই আমাদের সবার উচিত আতঙ্কিত না হয়ে এর আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করা।

ডা. এ কে এম ফরহাদ হোসাইন