দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাঘা শাখার উদ্যোগে সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় নাগরীক করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা
- প্রকাশিত সময় ০৯:৩৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০
- / 124
বাঘা উপজেলা প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের বহুত্ববাদী সমাজে শান্তি সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাগরিক ও রাষ্ট্রের করণীয় শীর্ষক প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাঘা উপজেলা শাখার উদ্দোগে আজ ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ নাটোরের উত্তরা গনভবন প্রাঙ্গনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সুজন বাঘা উপজেলা শাখার সভাপতি অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ওহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং দি হাঙ্গার বাঘা শাখার কো অর্ডিনেটর শ্রী উত্তম কুমারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি আলোচক ও রিসোর্স হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ড আমস্ট্রাং ইউনিভার্সিটির ছাত্রী রোজ মেরি।
অনন্যাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট রাজশাহী জোন আঞ্চলিক স্বমনয়কারি মিজানুর রহমান, রাজশাহী ডিস্ট্রিক ফ্যাসিলেটর আল আমিন, হাঙ্গার পিচ এ্যামবাচার ও চকরাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম, পিচ এ্যামবাচার সুরুজ্জামান সুরুজ, মনিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, আড়ানী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাড. ফিরোজ আহম্মেদ রনজু, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, সাবেক মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান ফারহানা রুমি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বাঘা উপজেলা শাখা সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক শাহানুর আলম বাবু, রানু আক্তার প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জাতি, ধর্ম, গোত্র ও পরিচয়ের ভিন্নতায় পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, সহযোগিতা, ও মানবিকতার মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়েই একটি সমাজ তথা একটি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। যে সমাজ বা রাষ্ট্র তার প্রধান্য বিস্তারকারী গোষ্ঠীর সমান্তরালে অন্যান্য দূর্বলতর গোষ্ঠীর সকল নাগরিকের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও মালিকানা নিশ্চিত করে, যে সমাজ সুস্থ ধারায় পরিচালিত হয়, সে সমাজ বা রাষ্ট্র সফল ও সুন্দরভাবে বিকশিত হয়। অন্যথায় তা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়, কখনও বা ভেঙে পড়ে।
সমাজ বিজ্ঞানীরা সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টের যতগুলো কারন চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পরিচয়হীনতাকে প্রধানতম কারন বলা যায়। পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ’গড়ে ওঠে মানুষের জাতি-ধর্ম-বর্ণ- শ্রেণী-লিঙ্গ-ভাষার বিভিন্নতাকে কেন্দ্র করে। রাজনৈতিক পরিচয়ও এই বিদ্বেষের ভিত্তি হতে পারে, তবে এটি জাতি-ধর্ম বা ভাষার মতো স্থায়ী কোনও বিবেচ্য বিষয় নয়।
রাজনৈতিক অস্থিরতা হর-হামেশাই পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষকে উস্কে দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়েও দেখা গেছে যে, সহিংসতার সাধারণ এবং সহজ শিকার হচ্ছে নারী এবং জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা, যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিবাদমান কোনো পক্ষভুক্ত নয়।
সমাজে শান্তি সম্প্রীতি ও সৌহার্দ বিরাজমান রাখতে কিছু শুভবোধ সম্পন্ন, নিবেদিত মানুষ দরকার। সমাজে প্রভাব বিস্তারের সামর্থ্য রয়েছে এমনকিছু মানুষকে এই কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করা দরকার, যারা সম্প্রীতি বিনষ্টের ন্যূনতম আশঙ্কা দেখামাত্র সেখানে হস্তক্ষেপ করবে, সমাজে ভেদাভেদের উর্দ্ধে সম্প্রীতিকে ঠাঁই দেবে এবং মানুষকে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতায়িত করবে। একটি বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে তোলার তাগিদে ও প্রবল জনমত তৈরির কাজটিও এরাই করতে পারে।
বক্তারা আরও বলেন, ‘ক্ষমতা ও সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা হয়। তাই যারা সম্প্রীতি নষ্ট করে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আর সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং স্থানীয়ভাবে স্থানীয় সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
সামাজিক সম্প্রীতি ও অগ্রগতিতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমাদের নাগরিকদেরও সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাগুলোই মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা পালন করবে। একইসঙ্গে সফলতার উদাহরণগুলোকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে, যাতে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হয়।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা ও গণতন্ত্রকে সমুন্বত রাখার জন্য সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা দরকার। ’দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ সাম্য, ন্যায়, ইনসাফ, শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।
এছাড়াও আলোচনা সভায় সমাজ থেকে বাল্য বিবাহ রোধ, ইভটিজারদের গঠনমুলকভাবে প্রতিরোধ, নারী ধর্ষন, নারীর প্রতি যে কোন ধরনের সহিংসতা বন্ধে প্রানবন্ত আলোচনা করা হয়।
সবশেষে মধ্যাহ্নভোজ শেষে সভাপতি আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষনা করেন ।