ঢাকা ১২:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি :
সারাদেশের জেলা উপোজেলা পর্যায়ে দৈনিক স্বতঃকণ্ঠে সংবাদকর্মী নিয়োগ চলছে । আগ্রহী প্রার্থীগন জীবন বৃত্তান্ত ইমেইল করুন shatakantha.info@gmail.com // দৈনিক স্বতঃকণ্ঠ অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭১১-৩৩৩৮১১, ০১৭৪৪-১২৪৮১৪

বাংলাদেশে যে সব ফল ফলছে বারো মাস

বার্তাকক্ষ
  • প্রকাশিত সময় ১০:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / 321

বারো মাসই নতুন নতুন জাতের ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের কৃষক সমাজ। ভালো দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক ধানী জমিতে ফলের বাগান গড়ে তুলছেন। এ কারণে প্রতি বছরই ফল চাষের জমি বাড়ছে এবং ফল উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও চেষ্টা করছেন বারো মাসই ফল উৎপাদন করা যায় কিনা। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা সফলও হয়েছেন। যেমন বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের আম এখন সাত মাসই পাওয়া যায়। বারো মাস থাই পেয়ারা উৎপাদন এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আধুনিক প্রযুক্তি তথা হরমোন ব্যবস্থা করে বারো মাস আনারস উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ফল উৎপাদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ফলের জমি ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৪৫ হেক্টর। এই পরিমাণ জমিতে ফলের উৎপাদন হয়েছে ৯৯.৭২ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে ফল উৎপাদন হয়েছে ১০৬.০৮ লাখ মেট্রিক টন। এক বছরের ব্যবধানে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ৬.৩৬ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হটিকালচার উইংয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে ১৭৩টি হটিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে সেন্টারের কর্মীরা বিভিন্ন ফলের কোটি কোটি চারা ও কলম উৎপাদন করে তা কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা ফল গাছের শ্রেণি বিন্যাস করেছে।

যেমন উত্তরা ল, মধ্যা ল ও উপক‚লীয় অ লে কোন কোন ফল ভালো উৎপাদন হবে সে অনুযায়ী ৫০-৬০ প্রকার বিভিন্ন ফলের চারা ও কলম সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব চারা কৃষকদের মাঝে ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষকও লাভবান হচ্ছে। ভালো জাতের কলম ও চারার নিশ্চয়তা পাচ্ছে। ড্রাগন, স্ট্রবেরি, থাই পেয়ারার নাম যারা কখনই শোনেনি তারাই আজ এ ফলের চাষ করে উচ্চমূল্যে বাজারে বিক্রি করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছুদিন আগেই মালটা সম্পূর্ণ বিদেশ নির্ভর ফল ছিল। এখন দেশে উৎপাদিত এ ফল দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। এক সময় বাংলাদেশের মাল্টা বিদেশে রফতানি হবে সেদিন বেশি দূরে নয়। গবেষণার মাধ্যমে আমের আরলি ও লেট ভ্যারাটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে প্রথম আম পাকার শুরু থেকে প্রায় সাত মাস পর্যন্ত আম পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, গত চার বছরে আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেয়ারা ও আনারসের মতো দেশি ফল উৎপাদন দ্রæত হারে বাড়ছে। সংস্থাটির ২০১৫ সালের প্রধান ফসলের পরিসংখ্যান-বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে ১৮ প্রজাতির ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে এবং উৎপাদন বাড়ছে নিয়মিতভাবে।

বিবিএসের তথ্যমতে, গত চার বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন বেড়েছে পেয়ারার। এই সময়ে দেশে পেয়ারার ফলন দ্বিগুণ হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে কাজী পেয়ারা চাষের মধ্য দিয়ে উন্নত জাতের পেয়ারা চাষ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত ছয়টি উন্নত জাতের পেয়ারা এবং বেসরকারিভাবে আমদানি হওয়া থাই পেয়ারা চাষে দেশে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে।

বিবিএসের হিসাবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে পেয়ারার ফলন হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে প্রায় ২ লাখ টন লিচু, ৪ লাখ ৭০ হাজার টন পেঁপে, ৪০ হাজার টন কমলা, ৩ লাখ ৭০ হাজার টন আনারস ও ১ লাখ ৫৫ হাজার টন কুল উৎপাদিত হয়েছে। আর মোট ফল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি টন।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, দেশে বর্তমানে ৪৫ প্রজাতির ফল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট ১ কোটি টন ফল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমের উৎপাদন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদিত হয়েছিল ১২ লাখ ৫০ হাজার টন। আর ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ টন। শুধু উৎপাদনই বৃদ্ধি হয়নি, বাংলাদেশ থেকে ফল রফতানিও প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ফল রফতানি থেকে আয় আড়াই গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৬-১৭ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৮৮ কোটি টাকার ফল রফতানি করে। ২০১৬-১৭ ও ২০১৮-১৯ এই দুই অর্থবছরে তা বেড়ে ৭৮০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ফল উৎপাদন ৩ থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আম, পেয়ারা ও কুল বা বরইর বেশ কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষকরা গত পাঁচ বছরে ৮৪টি ফলের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ কারণে হেক্টরপ্রতি ফলন আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হটিকালচার উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. কুদরত-ই-গণী বলেন, ফল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বর্তমান সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে প্রতি বছরই ফলের উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া ফল উৎপাদনে অধিক লাভ দেখে কৃষকও আগ্রহী হয়ে উঠছে। বারি-৬ আম উদ্ভাবন করা হয়েছে পাহাড়ি এলাকার জন্য। এ বছর দেশের তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপকভাবে আম চাষ হয়েছে। পাহাড়ে আগে কখনই পরিকল্পিতভাবে আম চাষ হতো না। তিনি বলেন, থাই পেয়ারা কৃষকের সুদিন ফিরিয়েছে। কৃষকদের ট্রেনিংসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার কারণে কৃষকরা এখন পলিব্যাগ পরিয়ে ফলের উৎপাদন বাড়াচ্ছে।

হটিকালচার উইংয়ে কর্মরত কৃষিবিদ মাহবুবা মুনমুন বলেন, পিরোজপুরে একজন মানুষের ৫০ একরের মালটা বাগান রয়েছে। এ এলাকায় ৩২০টি মালটা বাগান গড়ে উঠেছে। মালটা চাষে সফলতার কারণে এখানে একটি গ্রামের নাম করণ হয়েছে মালটা গ্রাম।

তিনি বলেন, নতুন উদ্ভাবিত খাটো নারিকেলের চারা বিতরণ করা হচ্ছে কৃষকদের মাঝে। নারিকেল গাছে ফলন বেশি। তাছাড়া ঝড়েও এ ধরনের চারা ভেঙে পড়ে না। এছাড়া গাছের পরিচর্যা, নারিকেল সংগ্রহ খুবই সহজ। নারিকেলের প্রতিটি অংশই গুরুত্বপূর্ণ এবং কাজে লাগে বলে জানান এই কৃষিবিদ।

এসএম শামসুজ্জোহা
ঢাকা।

বাংলাদেশে যে সব ফল ফলছে বারো মাস

প্রকাশিত সময় ১০:১৫:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০

বারো মাসই নতুন নতুন জাতের ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের কৃষক সমাজ। ভালো দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক ধানী জমিতে ফলের বাগান গড়ে তুলছেন। এ কারণে প্রতি বছরই ফল চাষের জমি বাড়ছে এবং ফল উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও চেষ্টা করছেন বারো মাসই ফল উৎপাদন করা যায় কিনা। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা সফলও হয়েছেন। যেমন বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের আম এখন সাত মাসই পাওয়া যায়। বারো মাস থাই পেয়ারা উৎপাদন এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আধুনিক প্রযুক্তি তথা হরমোন ব্যবস্থা করে বারো মাস আনারস উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ফল উৎপাদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ফলের জমি ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৪৫ হেক্টর। এই পরিমাণ জমিতে ফলের উৎপাদন হয়েছে ৯৯.৭২ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে ফল উৎপাদন হয়েছে ১০৬.০৮ লাখ মেট্রিক টন। এক বছরের ব্যবধানে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ৬.৩৬ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হটিকালচার উইংয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে ১৭৩টি হটিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে সেন্টারের কর্মীরা বিভিন্ন ফলের কোটি কোটি চারা ও কলম উৎপাদন করে তা কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা ফল গাছের শ্রেণি বিন্যাস করেছে।

যেমন উত্তরা ল, মধ্যা ল ও উপক‚লীয় অ লে কোন কোন ফল ভালো উৎপাদন হবে সে অনুযায়ী ৫০-৬০ প্রকার বিভিন্ন ফলের চারা ও কলম সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব চারা কৃষকদের মাঝে ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষকও লাভবান হচ্ছে। ভালো জাতের কলম ও চারার নিশ্চয়তা পাচ্ছে। ড্রাগন, স্ট্রবেরি, থাই পেয়ারার নাম যারা কখনই শোনেনি তারাই আজ এ ফলের চাষ করে উচ্চমূল্যে বাজারে বিক্রি করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছুদিন আগেই মালটা সম্পূর্ণ বিদেশ নির্ভর ফল ছিল। এখন দেশে উৎপাদিত এ ফল দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। এক সময় বাংলাদেশের মাল্টা বিদেশে রফতানি হবে সেদিন বেশি দূরে নয়। গবেষণার মাধ্যমে আমের আরলি ও লেট ভ্যারাটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে প্রথম আম পাকার শুরু থেকে প্রায় সাত মাস পর্যন্ত আম পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, গত চার বছরে আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেয়ারা ও আনারসের মতো দেশি ফল উৎপাদন দ্রæত হারে বাড়ছে। সংস্থাটির ২০১৫ সালের প্রধান ফসলের পরিসংখ্যান-বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে ১৮ প্রজাতির ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে এবং উৎপাদন বাড়ছে নিয়মিতভাবে।

বিবিএসের তথ্যমতে, গত চার বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন বেড়েছে পেয়ারার। এই সময়ে দেশে পেয়ারার ফলন দ্বিগুণ হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে কাজী পেয়ারা চাষের মধ্য দিয়ে উন্নত জাতের পেয়ারা চাষ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত ছয়টি উন্নত জাতের পেয়ারা এবং বেসরকারিভাবে আমদানি হওয়া থাই পেয়ারা চাষে দেশে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে।

বিবিএসের হিসাবে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে পেয়ারার ফলন হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে প্রায় ২ লাখ টন লিচু, ৪ লাখ ৭০ হাজার টন পেঁপে, ৪০ হাজার টন কমলা, ৩ লাখ ৭০ হাজার টন আনারস ও ১ লাখ ৫৫ হাজার টন কুল উৎপাদিত হয়েছে। আর মোট ফল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি টন।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, দেশে বর্তমানে ৪৫ প্রজাতির ফল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট ১ কোটি টন ফল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমের উৎপাদন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদিত হয়েছিল ১২ লাখ ৫০ হাজার টন। আর ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৫ লাখ টন। শুধু উৎপাদনই বৃদ্ধি হয়নি, বাংলাদেশ থেকে ফল রফতানিও প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ফল রফতানি থেকে আয় আড়াই গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৬-১৭ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৮৮ কোটি টাকার ফল রফতানি করে। ২০১৬-১৭ ও ২০১৮-১৯ এই দুই অর্থবছরে তা বেড়ে ৭৮০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ফল উৎপাদন ৩ থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আম, পেয়ারা ও কুল বা বরইর বেশ কয়েকটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষকরা গত পাঁচ বছরে ৮৪টি ফলের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ কারণে হেক্টরপ্রতি ফলন আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হটিকালচার উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. কুদরত-ই-গণী বলেন, ফল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বর্তমান সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে প্রতি বছরই ফলের উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া ফল উৎপাদনে অধিক লাভ দেখে কৃষকও আগ্রহী হয়ে উঠছে। বারি-৬ আম উদ্ভাবন করা হয়েছে পাহাড়ি এলাকার জন্য। এ বছর দেশের তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপকভাবে আম চাষ হয়েছে। পাহাড়ে আগে কখনই পরিকল্পিতভাবে আম চাষ হতো না। তিনি বলেন, থাই পেয়ারা কৃষকের সুদিন ফিরিয়েছে। কৃষকদের ট্রেনিংসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার কারণে কৃষকরা এখন পলিব্যাগ পরিয়ে ফলের উৎপাদন বাড়াচ্ছে।

হটিকালচার উইংয়ে কর্মরত কৃষিবিদ মাহবুবা মুনমুন বলেন, পিরোজপুরে একজন মানুষের ৫০ একরের মালটা বাগান রয়েছে। এ এলাকায় ৩২০টি মালটা বাগান গড়ে উঠেছে। মালটা চাষে সফলতার কারণে এখানে একটি গ্রামের নাম করণ হয়েছে মালটা গ্রাম।

তিনি বলেন, নতুন উদ্ভাবিত খাটো নারিকেলের চারা বিতরণ করা হচ্ছে কৃষকদের মাঝে। নারিকেল গাছে ফলন বেশি। তাছাড়া ঝড়েও এ ধরনের চারা ভেঙে পড়ে না। এছাড়া গাছের পরিচর্যা, নারিকেল সংগ্রহ খুবই সহজ। নারিকেলের প্রতিটি অংশই গুরুত্বপূর্ণ এবং কাজে লাগে বলে জানান এই কৃষিবিদ।

এসএম শামসুজ্জোহা
ঢাকা।